সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: পুরনো পাড়ায় গিয়ে প্রতিবেশীর খোঁজখবর নিচ্ছিলেন ফুচকা বিক্রেতা। কিন্তু তার পরিণতি যে এমন মর্মান্তিক হবে, তা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও কেউ কল্পনা করতে পারেননি। অথচ দুর্গাপুরের (Durgapur) শ্রমিক নগর এলাকায় ঘটল সেটাই। পুরনো প্রতিবেশীর সঙ্গে সামান্য বচসা থেকে মারধর, আর তার জেরে মৃত্যু হল ফুচকাওয়ালার। মঙ্গলবার ভোরে হাসপাতালে ওই ফুচকা বিক্রেতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য। তিনজনকে আটক করেছে কোকওভেন থানার পুলিশ।
জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম রামপ্রসাদ সরকার। বয়স ৫০ বছর। মৃত রামপ্রসাদ সরকার দুর্গাপুর স্টেশন বাসস্ট্যান্ডে ফুচকা বিক্রি করতেন। ঘটনার সূত্রপাত সোমবার রাতে। দুর্গাপুর নগর নিগমের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কোকওভেন থানার দুর্গাপুর স্টেশন সংলগ্ন শ্রমিক নগর এলাকায় পুরনো এলাকার প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন রামপ্রসাদ সরকার। এক বৃদ্ধ প্রতিবেশীকে বাইরে খাটিয়াতে শুয়ে থাকতে দেখে তাঁর খোঁজ নেন রামপ্রসাদ। ভুল বোঝাবুঝির শুরুটা ঠিক এইখান থেকেই। দু, এক কথা হতে হতেই ওই বৃদ্ধর পরিবারের সঙ্গে রামপ্রসাদের বচসা বেঁধে যায়। অভিযোগ, রামপ্রসাদ মদ্যপ (Drunk)অবস্থায় ছিলেন। বচসা শুরু হওয়ার পর বৃদ্ধকে মারধর করেন তিনি।
[আরও পড়ুন: বড়সড় আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ, অ্যামওয়ের ৭৫৭ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল ED]
তখনকার মতো পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়। কিন্তু অভিযোগ, রাত গভীর হতেই ওই বৃদ্ধের ছেলে ও তাঁর দলবল দুর্গাপুর স্টেশন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাঁকুড়া মোড়ের কাছ থেকে রামপ্রসাদকে ধাওয়া করে তুলে আনে শ্রমিক নগর সংলগ্ন একটি মাঠের সামনে। শুরু হয় রামপ্রসাদবাবুকে ব্যাপক মারধর বলে অভিযোগ। রামপ্রসাদ সরকারকে ওই বৃদ্ধের ছেলে ও তাঁর দলবল পিটিয়ে (Lynching) খুন করেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রামপ্রসাদ সরকারকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রাতে। মঙ্গলবার ভোরে মৃত্যু হয় রামপ্রসাদবাবুর। তাঁর পুরনো পাড়ার পড়শিদের অভিযোগ, রামপ্রসাদকে ইচ্ছাকৃতভাবে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে তিন সন্দেহভাজন ব্যক্তি – বিশ্বজিৎ জানা, সুরজিৎ সরকার, মনা দাস, শুভজিৎ সরকার। এঁরা সকলে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি প্রতিবেশীদের। কোকওভেন থানার পুলিশ তিনজনকে আটক করলেও মূল অভিযুক্ত বিশ্বজিৎ জানা পলাতক বলে জানা গিয়েছে। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায়।
[আরও পড়ুন: সিন্ডিকেট বিবাদের জের, ভরদুপুরে বাঁশদ্রোণীতে চলল গুলি]
পঙ্কজবাবু ঘটনার খবর শুনে সকালেই মৃত রামপ্রসাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি জানান, “দুর্গাপুরে এই রকম বর্বরোচিত ঘটনা কবে ঘটেছে জানি না। জ্যান্ত ছেলেকে পিটিয়ে খুন (Murder) হল। তৃণমূলের কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে তার অনুগামীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যারা যারা যুক্ত তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।” যদিও অভিযুক্তদের পরিবার যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর শিপুল সাহা বলেন, “অত্যন্ত নিন্দাজনক ঘটনা। বিরোধীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে ও কারা যুক্ত, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।” আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের এসিপি (দুর্গাপুর) প্রবুদ্ধ মুখোপাধ্যায় জানান, “কী কারণে মৃত্যু তা এখনও স্পষ্ট নয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে তা পরিষ্কার হবে। তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আটক করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।”