সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: প্রাইভেট টিউশন নয়, নয় কোনও কোচিং সেন্টারও। ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্বের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সুশিক্ষার পাঠ দিতে এবার এগিয়ে এল গ্রাম পঞ্চায়েতই (Gram Panchayet)। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে চালু হল পাঠশালা। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই অবৈতনিক পাঠশালার নাম দেওয়া হয়েছে ‘পঞ্চায়েতের পাঠশালা।’ উদ্যোক্তা দক্ষিণ ২৪ পরগনার (South 24 Parganas) সাগর ব্লকের ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েতের।
সুন্দরবনের এক প্রত্যন্ত দ্বীপ ঘোড়ামারা। একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দ্বীপটির অস্তিত্বও প্রায় বিপন্ন। পরপর বিপর্যয় ও কোভিড মহামারীর দাপটে কর্মহীন দ্বীপবাসীর অর্থনৈতিক অবস্থাও প্রায় সঙ্গীন। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব গিয়ে পড়েছে দ্বীপের বাসিন্দাদের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার উপরও। দিনদিন যেমন বাড়ছিল স্কুলছুটের সংখ্যা তেমনই বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রমের মত নানা সামাজিক অপরাধও বেড়ে চলেছিল পাল্লা দিয়ে। ছোট্ট এই দ্বীপে প্রাইভেট টিউশনি (Private Tusion) কিংবা কোচিং সেন্টারেরও তেমন বাড়বাড়ন্ত নেই। হাতে গোনা যে দু’একটি রয়েছে, সেখানে দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার সুযোগ একেবারেই নেই। সেই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্যই এক অভিনব উপায় বের করল জনসংখ্যা ও আয়তনের বিচারে রাজ্যের এই ক্ষুদ্রতম ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েতের উদ্যোগেই শিশু-কিশোরদের নিয়ে শুরু হল অবৈতনিক পাঠশালা।
[আরও পড়ুন: ‘বিদ্রোহ আর চুমুর দিব্যি’… অগ্নিগর্ভ শ্রীলঙ্কায় চুম্বনরত জুটির ছবি ভাইরাল]
বুধবার থেকেই পথ চলা শুরু হয়েছে এই পাঠশালার। স্থানীয় মিলন বিদ্যাপীঠে এদিন পাঠশালার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। পঞ্চায়েত প্রধান সঞ্জীব সাগর বলেন, ”এটি মূলত: একটি পাঠ সহায়তা কেন্দ্র। যেখানে এসে পড়ুয়ারা পুঁথিগত পাঠ গ্রহণের পাশাপাশি প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠারও শিক্ষা গ্রহণ করবে। দ্বীপের বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীর পরিবারই নিম্নবিত্ত। আর্থিক সঙ্গতিহীন সেইসমস্ত ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের পক্ষে ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট টিউটর কিংবা কোচিং সেন্টারগুলিতে পাঠানো রীতিমত দুঃসাধ্য। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে ক্রমশই পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে তাদের। তাছাড়া বর্তমানে স্কুলশিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন পড়ানোয় রয়েছে নানা সরকারি বিধিনিষেধ। এসব বিষয় মাথায় রেখেই ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েত চালু করেছে পঞ্চায়েতের পাঠশালা।’’ এই পাঠশালায় ছাত্রছাত্রীদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, সম্পূর্ণ বিনা বেতনে এই পাঠশালায় পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের সুন্দর চরিত্র গঠনেও নানাভাবে শিক্ষাদান করা হবে। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ঘোড়ামারারই বেশ কিছু যুবকও গ্রাম পঞ্চায়েতের আধিকারিকরা ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মানোন্নয়নে ও সুচরিত্র গঠনে সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে এই গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এ পর্যন্ত পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৫৩ জন ছাত্রছাত্রী এই ‘পঞ্চায়েত পাঠশালায়’ এসে পাঠ নিতে নাম লিখিয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে আসা ছাত্রছাত্রী।
[আরও পড়ুন: পেগাসাসের পরে নজরদারি ড্রোন, বন্ধুরাষ্ট্র ভারতকে ফের সাহায্য ইজরায়েলি সংস্থার]
সমাজের উন্নতিতে ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েতের এই অভিনব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষানুরাগী মানুষজন। তাঁদের কথায়, এই প্রচেষ্টা পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে এক নতুন অভিমুখে চালনা করার দিশা দেখাবে। নবীন প্রজন্মের জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নেও গ্রাম পঞ্চায়েতের এই উদ্যোগে আশার আলো দেখছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন।