সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মাথা নিচু করে দুর্গার মুখোশ তৈরি করে যাচ্ছেন কলেজ পড়ুয়া অভিজিৎ। বাবা গৌতম সূত্রধর দুর্গার সেই ছৌ মুখোশ প্যাকেটবন্দি করছেন। ‘মনোরঞ্জন মুখোশ ঘর’ উত্তর ২৪ পরগনার বারাকপুরের ঘোষপাড়ায় ছৌ মুখোশ দিয়ে মণ্ডপ সাজানোর বরাত পেয়েছেন। তাই ওই মুখোশ ঘর থেকে একাধিক শিল্পীকে নানান ছৌ মুখোশ দিয়ে সেখানে পাঠানো হয়েছে। এই মুখোশ ঘর থেকেই নব দুর্গার মুখোশ গিয়েছে কাঁথিতে। মায়ের মণ্ডপ সাজাতে দুর্গার মুখোশ গিয়েছে উত্তর চব্বিশ পরগনার আগরপাড়া। মুখোশ যাচ্ছে বিহারের নালন্দাতেও। দুর্গার মুখোশ বিক্রি হচ্ছে ব্যাপক। সবমিলিয়ে মা উমা যেন হাসি ফুটিয়েছেন এই মুখোশ শিল্পীদের।
এই চড়িদার আরেক শিল্পী কিশোর সূত্রধরের হাতে তৈরি মুখোশে দক্ষিণ আফ্রিকার জনজাতির চেহারা ফুটিয়ে তুলে তার শিল্পকলা পুজোয় বিহারের নালন্দা যাচ্ছে। তার এই কাজ প্রায় শেষের মুখে। এই মুখোশগুলির মধ্যে একটি রয়েছে ৮ ফুটের উঁচু। এদিকে এই মুখোশ গ্রামে চলছে একাধিক দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজও। এই মাতৃপ্রতিমা গুলি যাবে বাঘমুন্ডির বিভিন্ন গ্রামে। সবে মিলিয়ে মহালয়ার পরে চরম ব্যস্ততা চড়িদায়।
[আরও পড়ুন: পাশে পড়ে কন্ডোম, মহিলার বিবস্ত্র দেহ উদ্ধারে ক্রমশ জোরাল ধর্ষণ করে খুনের সন্দেহ]
আগরপাড়ায় মণ্ডপ সাজাতে যাওয়া এই গ্রামের মুখোশ শিল্পী রাজা সূত্রধর বলেন, ” “আমরা এখানকার মণ্ডপের কাজ সব শেষ করে ফেলেছি। দুর্গার মুখোশ দিয়ে মণ্ডপ সাজানোর কাজ হয়েছে।” একইভাবে বারাকপুরে পলতা বেঙ্গল এনামেল বাবু কোয়ার্টার পুজো মণ্ডপের অন্যতম কর্মকর্তা সুবীর দাস বলেন, “পুরুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী ছৌ নৃত্যর মুখোশ দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে। আমাদের মণ্ডপ পুজোয় এবার ব্যাপক নজর কাড়বে।”
ফি বছরই পুজোয় এই মুখোশ গ্রাম রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত সহ ভিন রাজ্যে মণ্ডপ সাজানোর বরাত পায়। কিন্তু কোভিডের সময় থেকে পুজোয় এখানে বরাত একেবারে কমে গিয়েছিল। অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছিল এই গ্রাম। এখন অবশ্য ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এই মুখোশ গ্রাম চড়িদা। পুজোর বাজারে ১২০ টাকা করে দুর্গার ছোট মুখোশ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। এই মুখোশ মূলত কিনছেন পর্যটকরা। এছাড়া ছৌ নাচের দলগুলিও ব্যাপক মুখোশ কিনছে। কারণ পুজোয় তাদের নানা অনুষ্ঠানের বরাত মিলেছে। তাছাড়া ঘর সাজানো থেকে অতিথি আবাস, হোটেলের জন্য বড় মুখোশ বিক্রি হচ্ছে প্রায় আট-দশ হাজার টাকায়।
দেখুন ভিডিও: