ধীমান রায়, কাটোয়া: এ যেন উলটপুরাণ৷ পয়লা বৈশাখ কিংবা অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতেও নয়, আউশগ্রামের বিল্বগ্রামের ব্যবসায়ীদের হালখাতা হয় পয়লা আষাঢ়ে৷ বাংলা বছরের আষাঢ় মাসের প্রথম দিনে বিল্বগ্রাম এলাকায় সিংহভাগ ব্যবসায়ী তাঁদের দোকানে নতুনখাতা সারেন৷ প্রথা মেনে দোকানে পুজো হয় এই দিনে। এই প্রথা চলে আসছে প্রায় চার দশক ধরে৷ এমনই জানিয়েছেন স্থানীয়রা৷ শনিবার ধুমধাম করে এলাকার ব্যবসায়ীরা পালন করলেন হালখাতা।
পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম ১ ব্লকের বিল্বগ্রাম অঞ্চলে রয়েছে ১৭-১৮টি গ্রাম৷ তার মধ্যে বনপাশ স্টেশন বাজার জমজমাট বাজার এলাকা৷ বনপাশ বাজারে রয়েছে কয়েকশ দোকানপাট৷ শনিবার বাজারে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাঁদের দোকানের সামনে প্যান্ডেল তৈরি করেন৷ সাজানো হয়েছে আমের পল্লব ও ফুল দিয়ে৷ কোনও দোকানে যেমনটি দেখা যায় হালখাতা অনুষ্ঠানের সময়৷ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আষাঢ় মাসের প্রথম দিনেই তারা দোকানে হালখাতা সারেন। দোকানে গণেশ পুজো হয়৷ তাই দু’দিন আগে থেকেই তারা এই প্রস্তুতি নিয়েছেন৷
বনপাশ বাজারের ব্যবসায়ী বাপ্পাদিত্য দত্ত, রাজু পালরা বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় পয়লা আষাঢ়ই হালখাতা পালন করা হয়। এই প্রথা প্রায় ৪০-৪২ বছর ধরেই চলে আসছে।’’ স্থানীয়রা জানিয়েছেন শুধু বনপাশ বাজারের ব্যবসায়ীরাই নন, বিল্বগ্রাম অঞ্চলের বেলাড়ি, বড়া, তকিপুর, ভোতা, ব্রজপুর প্রভৃতি গ্রামে যে সমস্ত দোকানপাট রয়েছে ওই সমস্ত ব্যবসায়ীরাও পয়লা আষাঢ় দোকানে হালখাতা করেন৷ এই নিয়ম এলাকার প্রায় সমস্ত ব্যবসায়ী মেনে চলেন। কিন্তু এই অসময়ে হালখাতার রেওয়াজ কেন?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই এলাকা কৃষিপ্রধান এলাকা। মূলত ধান চাষের ওপরেই নির্ভরশীল এলাকাবাসী। স্থানীয় ব্যবসায়ী শান্ত হাজরা, বিকাশ মুখোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘বৈশাখ মাসে বোরো চাষে গ্রামবাসীরা ব্যস্ত থাকেন। তখন ধান ওঠে না। তাই সাধারণ মানুষের হাতে তেমন টাকা পয়সা থাকে না। আগে দেখা যেত পয়লা বৈশাখ বা অক্ষয় তৃতীয়ার সময় হালখাতা করলে ব্যবসায়ীদের পড়ে থাকা ধারের টাকা খরিদ্দারদের কাছে তেমন আদায় হত না। সম্ভবত সেই কারণে আমাদের পূর্ব পুরুষরা আষাঢ় মাসে হালখাতা চালু করে গিয়েছেন। সেই থেকে এখনও চলছে এই নিয়ম।’’
অন্যান্য এলাকায় হালখাতা অনুষ্ঠানে আড়ম্বর কিছুটা হ্রাস পেলেও বিল্বগ্রাম অঞ্চল এলাকায় প্রতিবছর ধুমধাম সহকারেই হালখাতা করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দোকানে দোকানে ভিড় দেখা যায়। মিষ্টির প্যাকেট, নতুন ক্যালেন্ডার সবেরই আয়োজন করা হয়। অসময়ের হালখাতা অনুষ্ঠান ঘিরে মাতেন এলাকাবাসী৷
ছবি: জয়ন্ত দাস
The post বৈশাখ বা অক্ষয় তৃতীয়ায় নয়! আষাঢ়ে হালখাতা এখন আউশগ্রামের উৎসব appeared first on Sangbad Pratidin.
