অর্ণব আইচ: ডাকাতি হওয়া ‘মৎস্যকুল’ কোন ভেড়িতে? কোথায় ‘লুকিয়ে’ রাখা হয়েছে তাদের? আর সেই অগুনতি ‘চিংড়ি শাবক’-এর সন্ধানেই উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas) সন্দেশখালিতে তোলপাড় কলকাতা পুলিশের।
কিন্তু ভেড়ির জলে খেলে বেড়ানো লক্ষ লাক্ষ এক চিলতে ‘শিশু’ বাগদা চিংড়ির মধ্যে কতগুলিকে কলকাতার রাস্তা থেকে লুট করা হয়েছিল, তা আদৌ শনাক্ত সম্ভব কিনা, তা ভেবে পাচ্ছেন না পুলিশ আধিকারিকরা। তবে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে এক ‘মাছ-ডাকাত’। তাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে সন্দেশখালিতে পুকুর ও ভেড়িগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকি ডাকাতরা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় গা-ঢাকা দিয়েছে, অথবা সেখান থেকে চোরাপথে বাংলাদেশে পালিয়েছে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না পুলিশকর্তারাও।
[আরও পড়ুন: বাইক ও ডাম্পারের ধাক্কায় ২ বিজেপি নেতার মৃত্যু, নিছক দুর্ঘটনা মানতে নারাজ পদ্মশিবির]
পুলিশ জানিয়েছে, কিছুদিন আগে এই ঘটনার সূত্রপাত। ওড়িশা (Odisha) থেকে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার বাগদা চিংড়ির ‘মীন’ নিয়ে কলকাতায় আসে একটি গাড়ি। ওই গাড়িটি বাইপাস হয়ে যাচ্ছিল উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট অঞ্চলের দিকেই। গাড়িটি পরমা আইল্যান্ড পার হয়ে বাইপাস ধরে এগনোর সময়ই অন্য একটি গাড়ি প্রচণ্ড গতিতে চলে আসে ওই গাড়িটির কাছে। তখন রাত প্রায় দু’টো। বাইপাসে গাড়ির সংখ্যাও কম। বাসন্তী হাইওয়েতে ওঠার আগেই বাইপাসের উপর দ্বিতীয় গাড়িটি এসে প্রথম গাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। প্রথম গাড়িটিতে বিজ্ঞানসম্মতভাবেই বাগদার ‘মীন’ নিয়ে আসা হচ্ছিল। দ্বিতীয় গাড়ি থেকে নেমে পড়ে চারজন। প্রথম গাড়ির তিন আরোহীকে রাস্তার উপর টেনে নামিয়ে ওই অভিযুক্ত চারজন তাদের অস্ত্র দিয়ে প্রচণ্ড মারধর করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মারের চোটে প্রায় অচেতন হয়ে যান তাঁরা। তার পরই শুরু হয় ‘মীন-ডাকাতি’।
প্রথম গাড়ি থেকে ডাকাতরা মীন ভরতি জার ও প্যাকেট নামিয়ে দ্বিতীয় গাড়িতে তোলে। এর পরই গাড়ি চালিয়ে উধাও হয়ে যায় তাঁরা। প্রথম গাড়ির আরোহীদের জ্ঞান ফিরে এলে তাঁরা প্রগতি ময়দান থানায় যান। পুলিশ আধিকারিকরা তাঁদের নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। যদিও ওই জায়গাটি সিসিটিভির আওতায় নয়। সেই কারণেই কোনও ফুটেজ মেলেনি। তবু কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ ঘটনাটির ব্যাপারে নিশ্চিত হয়। প্রগতি ময়দান থানায় ডাকাতির মামলা দায়ের হয়। অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
[আরও পড়ুন: অনুব্রত গড়ে নজর বিজেপির, সিউড়িতে সভা করতে নববর্ষের আগেই বাংলায় অমিত শাহ]
লুট করার পর ‘মাছ-ডাকাত’দের গাড়িটি যে যে রাস্তা ধরে পালায়, সেই রাস্তা ধরে এগনোর চেষ্টা করেন পুলিশ আধিকারিকরা। শেষ পর্যন্ত পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে বাগদা চিংড়ির মীন নিয়ে গিয়েছিল গাড়িটি। সেই অনুযায়ী পুলিশের টিম সন্দেশখালিতে হানা দেয়। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেরার মুখে ধৃত ব্যক্তি স্বীকার করে যে, সে নিজেও ডাকাত দলেরই এক সদস্য। ওড়িশা থেকে মীন আসছে, তা জানতে পেরেই তারা গাড়ি নিয়ে ডাকাতির ছক কষে। মীনগুলি সন্দেশখালির কয়েকটি ভেড়িতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরই পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, ডাকাতির মাল উদ্ধার হওয়া প্রায় অসম্ভব। কারণ, একাধিক ভেড়িতে লাখ লাখ মীনের মধ্যে ছাড়া হয়েছে ওই মীনগুলিও। তাই পুরো সন্দেশখালি তোলপাড় করেও যে লুটের জিনিস আর উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশের টিম।
[আরও পড়ুন: উধাও সিসি ক্যামেরা, ফুটেজের অভাবে রাজু ঝা খুনের সপ্তাহখানেক পরেও তদন্ত গতিহীন]
ভেড়িগুলি চিহ্নিত করার পর লুট যাওয়া সমপরিমাণ মীন তুলে ‘উদ্ধার’ করা হবে কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা করেন পুলিশ আধিকারিকরা। তবে ধৃতকে জেরা করে বাকি তিন ডাকাতের সন্ধান চলছে। উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক জায়গায় তাদের ডেরায় গিয়েও মেলেনি খোঁজ। তবে তাদের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।