নন্দন দত্ত, রামপুরহাট: বীরভূমে অবৈধ পাথর খননের অভিযোগে প্রায় সাড়ে ৯৬ কোটি টাকা জরিমানা করে একটি সংস্থাকে নোটিস দিল জেলা প্রশাসন। মুরারই ১ ব্লকের বড়ুয়া গোপালপুর মৌজার প্রায় ৪০টি প্লট থেকে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে পাথর খনন চলছিল। এই ঘটনায় একটি বেসরকারি সংস্থাকে প্রায় সাড়ে ৯৬ কোটি টাকা জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসন। রাজ্য সরকারের কোনও বৈধ খনির ইজারা ছাড়া এই পাথর উত্তোলন করা হচ্ছিল। যা সম্পূর্ণ বেআইনি বলে দাবি করেছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা।

গত ১১ বছর ধরে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে জেলায় লিজপ্রাপ্ত খনি ছাড়া পাথর খাদান থেকে পাথর তোলা নিষিদ্ধ। সব জেনেও প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই পাথর তোলা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। অভিযোগ পেয়ে জেলা ভূমি দপ্তরের একটি সমীক্ষক দল এলাকায় গিয়ে খাদানটির সমীক্ষা করে আসে। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, ৪০টি প্লট থেকে প্রায় ১৭ কোটি ১৮ লাখ ৭ হাজার ৯৮৯ ঘনফুট কালো পাথর খনন করা হয়েছিল। যা গত ১০০ বছর ধরে এই প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি অবাধে তুলে যাচ্ছে। বর্তমানে আরও উন্নতমানের যন্ত্র দিয়ে দিনে রাতে আরও প্রচুর পরিমাণ পাথর তুলে প্রকাশ্যে বিক্রি চলছিল বলে অভিযোগ। সেই পাথর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিবহণ করা হত।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে রাজগ্রাম স্টোন কোম্পানি পর্যন্ত ৮ কিমি দীর্ঘ রেল লাইন রয়েছে। যেখানে মালগাড়িতে পাথর বোঝাই করা হত। তবে রেল দপ্তর সম্প্রতি মালগাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। জেলাশাসক চিঠি দিয়ে কোম্পানিকে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে যে পরিমাণ পাথর বেআইনিভাবে বিক্রি করেছে তার জেরে ৯৫ কোটি ৯ লক্ষ ৫৭ হাজার ২৩৬ টাকা জমা দিতে হবে। একই সঙ্গে বকেয়া হিসাবে কোম্পানির কাছে জেলা প্রশাসন আরও ১ কোটি ২৩ লক্ষ ৯১ হাজার ৪৯৬ টাকা পাবে। অর্থাৎ মোট ৯৬ কোটি ৩৩ লক্ষ ৪৮ হাজার ৭৩০ টাকা সরকারি সুদ সমেত জমা দিতে হবে। এই চিঠি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই টাকা জমা দিতে হবে।
জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘‘সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যে পাথর উত্তোলন ও অবৈধ কার্যকলাপ পরিচালনা করা হয়েছে, তার জন্য কোম্পানির বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। মানবিকতার খাতিরে প্রথমে জরিমানা নেওয়া হয়েছে, তবে যদি ওই জরিমানা সরকারি খাতে জমা না করা হয়, তবে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।’’ স্টোন কোম্পানির অফিস ইনচার্জ সুকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত কোনও জরিমানা নোটিস পাইনি।’’ অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন চালানোর ফলে স্থানীয় পরিবেশ এবং প্রকৃতির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এদিকে নোটিস পাওয়ার আগেই নড়েচড়ে বসেছেন কোম্পানীর লোকজন। এলাকাবাসীরা জানান, শাসকদলের কাছের লোক হিসাবে পরিচয় দিয়ে এলাকার এক প্রভাবশালী লোক দিনে দুপুরে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছে। এতদিন পরে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন।