সুব্রত বিশ্বাস: ব্যাংক থেকে বিমা, বেসরকারিকরণের ঢল। ভারতীয় রেলেরও (Indian Railway) কিছু কিছু পরিষেবায় বেসরকারি ছোঁয়া পড়েছে। এবার কি রেলের হাসপাতালগুলির পালা? কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক এক নির্দেশ ঘিরে এমনই আশঙ্কার সিঁদুরে মেঘ রেলকর্মী মহলে। এবং পরিণামে অদূর ভবিষ্যতে বর্তমান-প্রাক্তন রেলকর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে প্রায় কোটিখানেক মানুষের নিখরচার চিকিৎসা পরিষেবা ধাক্কা খাবে কি না, তা নিয়ে জোর চর্চা।
গত ৭ এপ্রিল রেল বোর্ডের ইডি হেল্থ (জি) ডা. কে শ্রীধর প্রতিটি রেলের প্রিন্সিপ্যাল চিফ মেডিক্যাল ডিরেক্টরকে নির্দেশ পাঠিয়েছেন, রেল হাসপাতালে পিপিপি মডেল (PPP Model) আনতে এক উচ্চপর্যায়ের কমিটি গড়া হয়েছে। কমিটির কাছে প্রতিটি হাসপাতালের বার্ষিক ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে হবে। রেলের হাসপাতাল থেকে বাইরের হাসপাতালে পাঠানো রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় কত, নেফ্রোলজি, ইউরোলজি, কার্ডিওলজি, কার্ডিও থোরাসিক সার্জারি, ডায়ালিসিসের পিছনে প্রতি হাসপাতালে বছরে কত খরচ হয়, সব তথ্য বিস্তারিত পেশ করতে হবে। পাশাপাশি জানাতে হবে, হাসপাতাল কতটা জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে, নতুন কোনও ভবন আছে কিনা ইত্যাদি। নির্দিষ্টভাবে জানতে চাওয়া তথ্যগুলি জমা দেওয়ার সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে ১৯ এপ্রিল।
[আরও পড়ুন: জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে ধর্ষণের পর প্রেমিকার মৃত্যু! কাঠগড়ায় তৃণমূল নেতার ছেলে]
কোনও আলোচনা ছাড়াই রেল বোর্ডের এহেন নির্দেশে রেলের চিকিৎসা মহলে শোরগোল। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের ইঙ্গিত, পিপিপি মডেলের হাসপাতালে রেলকর্মীদের পাশাপাশি অ-রেল কর্মীদেরও চিকিৎসা হবে, নার্সিংহোমের ধাঁচে। একদিকে টাকা দিয়ে চিকিৎসা, অন্য দিকে নিখরচার চিকিৎসা একই ছাতার তলায় হলে বৈষম্যের যে সমূহ সম্ভাবনা, সেটাও ওঁদের কথায় স্পষ্ট। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবাদ দানা বাঁধছে। পূর্ব রেলের মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষের বক্তব্য, “সংগঠনের তরফে তীব্র বিরোধিতা করছি। আমরা লিখিতভাবে পূর্ব রেলের প্রিন্সিপ্যাল সিএমডিকে জানিয়েছি, কোনও রকমভাবে সম্মতি যেন না দেওয়া হয়।” ওঁদের অভিযোগ, হাসপাতাল বেসরকারি সংস্থার হাতে গেলে ঠিকা চিকিৎসক দিয়ে কাজ চলবে, রেলকর্মীরা পরিষেবা পাবেন না।
পরিষেবায় সমস্যার আশঙ্কা করেছেন রেলের অনেক চিকিৎসকও। তাঁরা জানাচ্ছেন, এখন আরইএলএইচএসের মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্তদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা দেয় রেল হাসপাতাল। বেসরকারি হাতে গেলে যা মিলবে না। এখন কিছু জটিল রোগের চিকিৎসা বা পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য রেলের সঙ্গে বাইরের কিছু হাসপাতালের চুক্তি আছে, সেখানকার খরচ রেলই বহন করে। বেসরকারিকরণ হলে সে সুবিধা কতটা মিলবে, তা-ও বলা যাচ্ছে না। ওঁদের এ-ও পর্যবেক্ষণ, রেলের ছোট হাসপাতালের উপর নয়, বেসরকারি সংস্থাগুলোর নজর থাকবে মূলত বড় শহরের বড় হাসপাতালের দিকে। যেমন পূর্ব রেলের বি আর সিং, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বিএনআর প্রভৃতি। প্রসঙ্গত, পূর্ব রেলের মোট আটটি ও দক্ষিণ-পূর্বের সাতটি হাসপাতালের প্রায় সব ক’টাই পশ্চিমবঙ্গে।
দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে রেল হাসপাতালের সংখ্যা ১২৫। সেখানে ১৪ লক্ষ কর্মীর সঙ্গে চিকিৎসা পরিষেবা পান তাঁদের পরিবারের লোকজনও। পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্তদের সংখ্যা ১৮ লক্ষের কাছাকাছি। ফলে চিকিৎসার জন্য রেলের মুখাপেক্ষী প্রায় এক কোটি মানুষ। এই মুহূর্তে বিএনআর হাসপাতালের বাৎসরিক খরচ প্রায় একশো কোটি, বিআরসিংয়ে আরও বেশি। ব্যয়ভার ঝেড়ে ফেলতে কেন্দ্র বেসরকারি হাতেই হাসপাতাল তুলে দেওয়ার তোড়জোড় করছে কিনা, রেলের স্বাস্থ্য বিভাগে আপাতত সেটাই জল্পনার বিষয়।’