শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: টানা বর্ষণ, জলমগ্ন চারপাশ। বৃষ্টি থামলেও জমা জল সঙ্গে সঙ্গেই নেমে যায়নি। পশ্চিম মেদিনীপুরের (West Midnapore) একাধিক ব্লকে জলে ডুবেছে অনেক বাড়ি। এমনকী ডুবে গিয়েছে ঘাটাল উপসংশোধনাগারও। আর তার জেরে রবিবার সকালে ব্যতিক্রমী দৃশ্যের সাক্ষী রইলেন ঘাটালবাসী। দেখা গেল, প্রকাশ্যে হাঁটুজল পেরিয়ে হেঁটে চলেছে একে একে ৬১ জন আসামি। এঁদের কেউ খুনি, কেউ বা কুখ্যাত চোর-ডাকাত। আবার কেউ বধূ নির্যাতনে অভিযুক্ত। কারও বা মাথায় ঝুলছে ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা তছরূপের খাঁড়া। এদের প্রত্যেকের সামনে এবং পিছনে বন্দুকধারী পুলিশ আর NDRF জওয়ান। আসলে, জলমগ্ন সংশোধনাগার থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্যত্র।
এ নিয়ে ঘাটালের (Ghatal) SDPO অগ্নিশ্বর চৌধুরী জানান, “ওই ৬১ জন আসামিকে মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়েছে। কারণ, SDO অফিসের গার্ডওয়াল ভেঙে শিলাবতী নদীর জল ঢুকে পড়েছে ঘাটাল উপ সংশোধনাগারে। প্রায় কোমর সমান জল। তাই তাঁদের নিরাপত্তার কথা ভেবে মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার নিয়ে আসা হবে ঘাটালে।”
[আরও পড়ুন: বারাসত হাসপাতালের Asistant Super পরিচয়ে আর্থিক ‘প্রতারণা’, গ্রেপ্তার অভিযুক্ত]
রবিবার ভোর চারটে নাগাদ SDO অফিসের গার্ডওয়াল ভেঙে জল ঢুকে পড়ে খোদ মহকুমাশাসকের চেম্বারে। হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে অফিস চত্বরে। একের পর এক অফিস ঘোলা জলে কার্যত ডুবে যায়। ভোর থেকেই ফাইল, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সরাতে তৎপর হয়ে উঠেন কর্মীরা। হাত লাগান মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস, ডিএমডিসি অর্জুন পাল। কোমর সমান জলের তলায় চলে যায় এসডিও অফিস। এই কার্যালয়ের পাশেই ঘাটাল উপ সংশোধনাগার। জল ঢুকে পড়ে সেখানেও। ভোর চারটে নাগাদ জলস্রোতের তীব্র শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আসামি থেকে জেল কর্মী – সকলের। কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিছানায় কোমর সমান জল! মুহূর্তে বেজে ওঠে বিপদ ঘন্টা।
[আরও পড়ুন: ৫৬ বছর পর ফের দুই বাংলার রেল যোগাযোগ, পণ্যবাহী Train ছুটল হলদিবাড়ি থেকে চিলাহাটি]
জেলরের ফোন পেয়ে পৌঁছে যান ঘাটালের ওসি দেবাংশু ভৌমিক। একটু পরেই চলে আসেন SDPO অগ্নিশ্বর চৌধুরী। তৎক্ষণে বুক, গলা জলে দাঁড়িয়ে আসামিরা। মেদিনীপুর জেলা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ৬১ জন আসামিকেই মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে (Central Jail) নিয়ে যাওয়া হয়। জেল থেকে প্রায় পাঁচশো ফুট প্রকাশ্যে হাঁটিয়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয় আসামীদের। সামনে পিছনে সশস্ত্র পুলিশ NDRF জওয়ান। কড়া নিরাপত্তায় গাড়িতে তোলা হয় তাঁদের। এই দৃশ্য দেখতে ভিড় জমান বানভাসি মানুষ। প্রকাশ্যে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও কোনও আসামিই পালানোর চেষ্টা করেনি বলে জানিয়েছেন এসডিপিও অগ্নিশ্বর চৌধুরী। তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পুলিশের গাড়িতে আসামিদের তুলে দেন। বলেন, ”প্রকাশ্যে কোমর সমান জল পেরিয়ে হেঁটে গেলেও কোনও আসামি পালানোর চেষ্টা করেনি। নিরাপদেই মেদিনীপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের।”