রুপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: সদ্য শেষ হওয়া দলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে কোন্দলের ঘটনার আঁচ এবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে। সোমবার রাজ্য কমিটির বৈঠকে এবার অভিযোগ উঠল উপদলীয় কার্যকলাপের। এই অভিযোগ সামনে আনলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার নেতারা, যাঁরা রাজ্য কমিটির সদস্য।
সম্প্রতি সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলন ঘিরে বেনজির কাণ্ড ঘটেছিল। একাধিক তরুণ নেতাকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে জেলা কমিটি থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ১৮ জন নেতানেত্রী। সেই ১৮ জনের তালিকায় রয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা সিপিএমের প্রাক্তণ সম্পাদক তথা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান সদস্য সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী মিলি চক্রবর্তী, প্রাক্তণ মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের পুত্র সাম্য সহ চন্দনা ঘোষ দস্তিদার, রামশংকর হালদার, সুব্রত দাশগুপ্ত, তনুশ্রী মণ্ডল প্রমুখ জেলা সিপিএমের পরিচিত মুখেরা। আর সোমবার আলিমুদ্দিনে রাজ্য কমিটির বৈঠকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের সম্পাদক রতন বাগচী—সহ তুষার ঘোষরা অভিযোগ করেন, জেলা পার্টিতে উপদলীয় কার্যকলাপ চলছে। বোঝাপড়া করেই একজোট হয়েই জেলা কমিটি থেকে নাম প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে মিলি চক্রবর্তী, সাম্য গঙ্গোপাধ্যায়, চন্দনা ঘোষ দস্তিদারদের বিরুদ্ধেই উপদলীয় কার্যকলাপ ও ‘ষড়যন্ত্র’ তত্ত্বের অভিযোগ এনেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের শমীক লাহিড়ী লবির নেতারা। এমনটাই সূত্রের খবর। পার্টি সূত্রে আরও খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পার্টির নেতারা এদিন রাজ্য কমিটির বৈঠকে বলেছে যে, এরিয়ে সম্মেলন থেকেই দলবাজি শুরু হয়েছে। যার প্রতিফলন জেলা সম্মেলনে হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনের উদ্বোধন করেছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সেলিম সেখানে উপদলীয় কার্যকলাপ বন্ধে বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই উপদলীয় কার্যকলাপের আঁচ পৌঁছে গেল রাজ্য কমিটির বৈঠকেও। সেলিম বলেছেন, বিষয়টি নজরে আছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিন বৈঠকে সেলিম ছাড়াও ছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র, শ্রীদীপ ভট্টাচার্যরা। এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের একটি পোস্ট নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে পার্টির মধ্যে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে সেলিম লিখেছেন, "বের হতে হবে তথাকথিত ‘কমফোর্ট জোন’ থেকে। শুধু পার্টি কর্মসূচি করাই যথেষ্ট নয়। ভাবনাচিন্তা, কাজের ধারাকেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ করতে হবে। নতুন নতুন পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কী বীজ নিহিত আছে, তা পার্টি কর্মীদের অনুসন্দান করতে হবে।’
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, পার্টিতে নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাকর্মীদের বড় অংশকে ‘কমফোর্ট জোন’ থেকে বেরিয়ে আসার বার্তা দিয়েছেন সেলিম। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, শুধু দলীয় কর্মসূচি যথেষ্ট নয়। সেই পুরনো আমলে, পুরনো ভাবনাচিন্তা নিয়ে পার্টির নেতাদের পড়ে থাকলে হবে না। কাজের ধারাকে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মেলাতে হবে। জনসংযোগের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সেলিম। সিপিএমের একটা বড় অংশই নিষ্ক্রিয়। সোশাল মিডিয়ায় তাদের বিপ্লব। যা বিভিন্ন সময়ে অস্বস্তিতে ফেলেছে আলিমুদ্দিনকেও। কিন্তু এদিন সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের এই পোস্ট কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে দলের জেলা সম্মেলনগুলো চলছে। ফেব্রুয়ারিতে রাজ্য সম্মেলন। তার আগে পার্টির নেতা-কর্মীদের বড় অংশের প্রতি সেলিমের এই বার্তা থেকে পার্টির নিচুতলার করুন অবস্থাটাই সামনে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই মাঠে নামতে হচ্ছে স্বয়ং রাজ্য সম্পাদককেও। এদিন রাজ্য কমিটির রিপোর্টিংয়ে উঠে এসেছে বর্তমানে আরজিকর ইস্যুতে আন্দোলনে পার্টি সক্রিয় নয়। বাংলাদেশ কাণ্ডেও দলের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া, বিভিন্ন জেলায় নতুন মুখ যাঁরা পার্টিতে আসছে তাঁদেরকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে যাতে মাঠে রাখা যায় সেই কথাও বলা হয়েছে।