সুমিত বিশ্বাস ও অমিতলাল সিং দেও, পুরুলিয়া ও মানবাজার: নতুন বছরের প্রথম দিনে সুস্থ অবস্থায় ঘরে পা রেখেছিল জিনাত। কিন্তু এবার একেবারে বাংলা ছুঁয়ে থাকা ঝাড়খণ্ডে ফের 'রয়েল বেঙ্গল টাইগ্রেস' আতঙ্ক! ঝাড়খণ্ডের সরাইখেলা-খরসোওয়া জেলার চৌকা থানার তুল গ্রামের বালিডি জঙ্গলে এই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
চান্ডিলের মহকুমা শাসক সরাইকেলা-খরসোওয়া বনবিভাগকে চিঠিতে বাঘের উল্লেখ করে জানিয়েছেন, ওই বাঘিনীকে ধরতে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো-সহ ফাঁদ পাতার পদক্ষেপ করতে। সেই চিঠি পাওয়ার পরে বসানো হয়েছে ট্র্যাপ ক্যামেরা। তবে এই বাঘের গলায় কোন রেডিও কলার না থাকায় তার অবস্থান জানতে পারছে না বন বিভাগ। এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে তাকে দেখতে পাওয়ার কথা জানানো যায়নি। তাহলে কীসের ভিত্তিতে এমন দাবি?
মঙ্গলবার সকালে তুল গ্রামের বালিডি জঙ্গলে এক বালক দাবি করে, সে দেখেছে বাঘটি দুটি গরুর উপরে হামলা করেছে। তাদের মধ্যে একটি গরুকে ধরতে পারেনি সে। কিন্তু অন্য গরুটির গলায় কামড়ে দিয়েছে বন্য জন্তুটি। ওই গরুগুলির সঙ্গে ছিল একটি বাছুর। তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। সন্দেহজনক পায়ের ছাপও দেখা গিয়েছে, যা প্রাথমিক ভাবে বাঘেরই বলে মনে করা হচ্ছে। আর সেই তথ্যের ভিত্তিতেই মহকুমা শাসকের চিঠি বলে জানা যাচ্ছে। পুরুলিয়া বন বিভাগ ঝাড়খণ্ড-লাগোয়া এই জেলার রেঞ্জগুলিকে সতর্ক করেছে। সরাইকেলা-খরসোওয়ার ডিএফও সাবা আনসারির দাবি, পায়ের ছাপ ও শিকারের ধরন দেখে মনে হচ্ছে লেপার্ড বা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চিহ্ন। তাহলে কি রয়েল বেঙ্গল টাইগ্রেস? ওই বনকর্তার কথায়, ''এখনও কোনও ছবি পাওয়া যায়নি। ফলে নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। আমাদের নজরদারি চলছে। ওই জঙ্গলে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়েছে।'' এও জানা যাচ্ছে, প্রত্যক্ষদর্শী ওই বালককে ছবি দেখানো হলে সে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবিতে সম্মতি দিয়েছে। ফলে ওই জঙ্গলে পেশার তাগিদে যাঁরা যেতেন, তাঁরাও যাওয়া বন্ধ করেছেন।
এদিকে পুরুলিয়া বন বিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, ''ঝাড়খণ্ডের তরফে আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনও মেসেজ বা চিঠি আসেনি। তবে আমাদের নজরদারি চলছে। আমরা সতর্ক রয়েছি।'' সেই সঙ্গেই পুরুলিয়া বন বিভাগের অনুমান, বাঘ নয়, চিতাবাঘ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কেননা বাঘ হলে গরুটিকে নিয়ে যেত। আবার আধিকারিকদের ধন্দে রেখেছে পায়ের ছাপ ও শিকার করার ধরন। যা দেখে আবার মনে হচ্ছে বাঘিনী। শেষপর্যন্ত ওই প্রাণীটি বাঘ না চিতাবাঘ এবং তাকে কীভাবে ফাঁদে ফেলা যায়, তা নিশ্চিত করতে চাইছে বন বিভাগ।