বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: চা পর্ষদের নয়া ফরমানে ৩০ নভেম্বর শেষ হচ্ছে উত্তরে চা পাতা তোলার মরশুম। যার জেরে বিপাকে উত্তরের চা শিল্প। নতুন নির্দেশ কার্যকরী হলে তরাই ও ডুয়ার্সে ৩৯ মিলিয়ন কেজি কম চা উৎপাদন হবে, এমনই দাবি চা বণিক সভাগুলোর। তিনমাস উৎপাদন বন্ধ রেখে বাগান খোলা রাখার মতো আর্থিক সঙ্গতিও ছোট চা বাগানগুলোর নেই।
একদিকে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। অন্যদিকে চা পর্ষদের নয়া নির্দেশ। 'দ্বিফলা'য় বিপাকে উত্তরের চা বলয়। ক্ষুদ্র চা চাষিদের আশঙ্কা, চা পর্ষদের নতুন নির্দেশ কার্যকরী হলে তরাই ও ডুয়ার্সে ৩৯ মিলিয়ন কেজি কম চা উৎপাদন হবে। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, "ভয়ংকর এক সংকটের মুখে চা শিল্প। ফার্স্ট এবং সেকেন্ড ফ্ল্যাশ মার খেয়েছে। অতিবর্ষণের জন্য বর্ষাকালীন উৎপাদন উদ্বেগজনক ভাবে কমেছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে চা পর্ষদ ৩০ নভেম্বর থেকে পাতা তোলা বন্ধ করার নির্দেশ। এটা কার্যকরী হলে ভয়ংকর বিপদ হবে।" তিনি জানান, চা পর্ষদের নির্দেশ অসমের ক্ষেত্রে যুক্তিপূর্ণ হলেও উত্তরে নয়। কারণ, অসমে নভেম্বরে শীত জাঁকিয়ে বসে। ওই সময় কাঁচা পাতার গুণগত মান খুবই খারাপ হয়। কিন্তু উত্তরে শীত জাঁকিয়ে বসে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি।
যে কারণে উত্তরে গত বছর পর্যন্ত ২৩ ডিসেম্বর চা পাতা তোলার শেষদিন ধার্য ছিল। ক্ষুদ্র চা চাষিদের অভিযোগ, বাস্তব পরিস্থিতি বিচার না করে চা পাতা তোলা বন্ধ রাখার দিনক্ষণ চা পর্ষদ একমাস এগিয়েছে। এর ফলে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রায় তিন মাস পাতা উৎপাদন বন্ধ রেখে বাগান চালিয়ে যেতে হবে। উত্তরের ৫০ হাজার ক্ষুদ্র চা চাষিদের অর্ধেকের সেই অর্থিক ক্ষমতা নেই। নিরুপায় হয়ে অনেকে বাগান বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন।
কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জানান, গত বছর ডিসেম্বরে ডুয়ার্স এবং তরাই এলাকায় মোট চা পাতা উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩৯ মিলিয়ন কেজি। এবার চা পর্ষদের নতুন নির্দেশ কার্যকরী হলে ৩৯ মিলিয়ন কেজি চা পাতা উৎপাদন মার খাবে। জলপাইগুড়ি ক্ষুদ্র চা চাষি সংগঠনের অন্যতম কর্ণধার রজত কার্জি জানান, এবার ৮০ শতাংশ ছোট চা বাগান তাপদাহে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিক হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ কোটি। এর পর প্রবল বৃষ্টির জন্য উৎপাদন কমেছে। লোকসান বেড়েছে। রজতবাবু বলেন, "পুজোর পর ভালো পরিমাণ পাতা এসেছে। কিন্তু ৩০ নভেম্বর পাতা তোলা বন্ধ হলে কোনও লাভ হবে না। বিষয়টি চা পর্ষদকে জানিয়েও লাভ হচ্ছে না।"