রমেন দাস: ধর্ম যার যার বড়মা সবার! বঙ্গের দেবী মাহাত্ম্যের একাধিক কথকতার ভিড়ে এই শব্দবন্ধই ভাইরাল হয়েছে সম্প্রতি। বলা ভালো, নৈহাটির (Naihati) গঙ্গাপাড় ছাড়িয়ে অন্তর্যামী বড়মা (Baro Maa) হয়ে উঠেছেন সর্বজনীন। সবার মা। বাংলার কালী (Maa Kali) আরাধনায় দিকে দিকে ছড়িয়েছে বড়মার নাম। কিন্তু এই ধর্মের অন্দরে অন্দরে ডুব দিয়েছে রাজনীতিও।বারাকপুরের (Barrackpore) মন্দির, মসজিদ, গীর্জার আধিক্যে অর্জুন-পার্থ-দেবদূতের নির্বাচনও হয়ে উঠেছে অভিনব 'দেবময়'। রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের ভোটে জেতার প্রয়াসে গঙ্গার মতোই বয়ে গিয়েছে ধর্মের স্রোতও।
এবারের নির্বাচনী আবহ। বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের প্রভূত সমস্যার মধ্যেও অর্জুন সিং (Arjun Singh), দলবদল ফ্যাক্টরের দাবানলেও বড় ফ্যাক্টর হিসেবে উঠে এসেছেন জাগ্রত সেই বড়মা-ই। অনেকেই বলছেন, বারাকপুরের ভোটভাগ্য নির্ধারণে নাকি বড়মার ভূমিকা সর্বাধিক! ভোটে ফ্যাক্টর হিসেবে এই বড়মা-ই নাকি বেশ গুরুত্বের! কেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, বাংলার দক্ষিণেশ্বর-কালীঘাট-তারাপীঠ অথবা যে কোনও শক্তিপীঠের মতোই জনপ্রিয়তায় প্রায় এক সারিতেই রয়েছেন নৈহাটির বড়মা। ধারে-ভারে এই দেবীরূপের গুরুত্ব রয়েছে গঙ্গাতীরবর্তী জনপদে। দাবি, ঠিক এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়েই বড়মা আবেগে ভর করেও নির্বাচনে সুবিধা অর্জন করতে পারেন কোনও কোনও প্রার্থী। যদিও নৈহাটি বড়কালী পুজো সমিতি-র সম্পাদক তাপস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ''মায়ের কৃপা রয়েছে। সেই কৃপা পাওয়ার আশায় আমাদের এখানে সকলেই আসেন। মায়ের শরণে আসেন সবাই। পার্থ ভৌমিক (Partha Bhowmick) , অর্জুন সিং এসেছেন। তাঁরা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পরেও এসেছেন। কিছুদিন আগেই শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) আসেন। মায়ের পুজো দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Abhishek Banerjee) । আমরা সকলের জন্যই সমান। মা সকলের, মা সবার ভালো চান। এখানে ধর্ম নেই, রাজনীতি নেই। কিন্তু বড় মা যে এবারের ভোটে বড় ফ্যাক্টর, মায়ের আশীর্বাদ যে গুরুত্বের, একথা মানতে দ্বিধা নেই আমারও।''
বড়মার দরবারে পার্থ ভৌমিক। ছবি সৌজন্যে- সোশ্যাল মিডিয়া।
[আরও পড়ুন: ‘মাছ খেয়ে দেখুন, কথা দিচ্ছি নিজে রান্না করব’, মোদিকে আমন্ত্রণ মমতার]
ভোটের প্রার্থী হয়েই বারাকপুরের তৃণমূল (TMC) 'সেনাপতি' পার্থ ভৌমিক ছুটে গিয়েছেন বড়মার মন্দিরে। নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) প্রার্থী হিসেবে অর্জুন সিংয়ের নাম ঘোষণার পরেই বড়মার কাছে যান তিনিও। যদিও পার্থ-অর্জুন আবহে ব্যাতিক্রমী সিপিএমের (CPIM) দেবদূত ঘোষ (Debdut Ghosh)। বামেদের দাবি, তারা তো ধর্মের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তাই এই প্রশ্ন ওঠেই না। অন্যদিকে বড়মা আবহেই সিপিএমকে খোঁচা দিয়েছেন কেউ কেউ। উঠেছে প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর প্রসঙ্গও।
বড়মার মন্দিরে অর্জুন সিং। ছবি সৌজন্যে- সোশ্যাল মিডিয়া।
তৃণমূল বলছে, বড়মা কেন, ধর্মীয় হানাহানির বাইরে গিয়ে ঈশ্বরভক্তি রয়েছে সর্বদা আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, সেই টানেই বড়মা। আবার বিজেপি বলছে, বড়মার আশীর্বাদ পাওয়া ভাগ্যের। সমস্ত দেবতা, হিন্দু ধর্ম, সবকিছুর জন্যই শ্রদ্ধা-ভক্তি রয়েছে বিজেপির, সেই টানেই বড়মা। বিজেপির দাবি, ২০ মে আসতে দিন দেখতে পারবেন আসল ছবি! নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বারাকপুরের ভোটারদের একটা বড় অংশ বলছেন, ''বড়মা আমাদের কছে আবেগ আর সেই আবেগে ভর করাও প্রয়োজন রাজনৈতিক নেতাদের। তার জন্যই হয়তো!''
গঙ্গাপাড়ে ফের নোঙর ফেলবেন অর্জুন, নাকি ঘাসে জোড়াফুল ফোটাবেন পার্থ, উত্তর মিলবে ৪ জুন। কিন্তু জয় হোক যাঁরই, ভোটশেষে জিতবে বড়মার মাহাত্ম্যই!