shono
Advertisement
Uluberia

জ্যাভলিনের ফলায় পক্ষাঘাতগ্রস্থ, প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গে নিয়েই মাধ্যমিকে স্কুলে তৃতীয় সৌরদীপ

এখনও বাঁ হাত বেশিরভাগই প্যারালাইজড। বাঁ পা টেনে চলতে হয়।
Published By: Suhrid DasPosted: 03:00 PM May 06, 2025Updated: 03:00 PM May 06, 2025

মণিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: চার বছর আগে স্কুলের বাৎসরিক স্পোর্টস দেখার সময় জ্যাভলিনের ফলা ঢুকে গিয়েছিল মাথার বাঁদিকে। সেই ঘটনার পর প্রায় দু'মাস ভর্তি ছিল কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। ওই কিশোরের মাথায় হয় তিনটি অস্ত্রোপচার। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও পক্ষাঘাতে বিছানায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়। আড়াই বছর ধরে চলে ফিজিওথেরাপি। মনের অদম্য ইচ্ছায় ধীরে ধীরে বসা, দাঁড়ানো। এখনও বাঁ হাত বেশিরভাগই প্যারালাইজড। স্কেল ধরতে পারে না। একহাতেই জ্যামিতি করতে হয়। সেজন্য পাথরের ভারী স্কেল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। বাঁ পা টেনে চলতে হয়। এসএসকেএম-এর চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে এখনও থাকতে হয় তাকে। এই প্রতিবন্ধকতা নিয়েও এবারে মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেল হাওড়ার শ্যামপুরের নাওদা নয়নচাঁদ বিদ্যাপীঠের ছাত্র সৌরদীপ বেরা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৩৬। ওই স্কুলে তার স্থান তৃতীয়। অঙ্কে তার প্রাপ্ত নম্বর ৯৩ এবং ভূগোলে ৯৯। ওই বিষয়গুলোতেই আরও বেশি ব্যবহার করতে হয় পেন্সিল, স্কেলের।

Advertisement

শ্যামপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে সৌরদীপ। বাবা সতীশচন্দ্র বেরা ফার্নিচারের কাজ করেন কলকাতায়। এখন আর সাইকেল চালাতে পারে না সৌরদীপ। প্রতিবন্ধকতা থাকায় বাড়ির লোকজনই তাকে সব জায়গায় নিয়ে যায়। বাবা ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যেতে না পারলে সেই যাতায়াতের জন্য ভরসা টোটো। তবে কোনও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাই তাকে পিছিয়ে দিতে পারেনি। মনের জোড় নিয়ে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে সে। দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মাধ্যমিকের এক একটি পরীক্ষা দিয়েছে সে। প্রত্যেকটি পরীক্ষায় যথেষ্ট ভালো দেয়। ফলাফলও তাকে হতাশ করেনি। স্কুলের শিক্ষকরা তো বটেই, পাড়া-প্রতিবেশীরাও তার এই সাফল্যে পঞ্চমুখ।

২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারির সেই ঘটনা মনে পড়লে আঁতকে ওঠেন সতীশবাবু, পরিবারের লোকেরা। সেদিন স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছিল। অন্যান্যদের সঙ্গেই নিরাপদ দূরত্বে দর্শকদের সঙ্গে বসেছিল ক্লাস সিক্সের সৌরদীপ। একটি জ্যাভলিনের ফলা তাঁর মাথায় এসে গেঁথে যায়। তারপর থেকেই দীর্ঘদিন হাসপাতালে কাটে তার। বিপদ কাটলেও বাড়িতে ফিরে পক্ষাঘাতের কারণে বিছানাতেই কেটেছে অনেকটা সময়। আড়াই বছর ধরে চলে ফিজিওথেরাপি। সেখান থেকেই কিছুটা হাঁটাচলা শুরু করতে পারে সে। ওই দুর্ঘটনার দেড় বছর পর সে স্কুলে যেতে পারে। সেদিন স্কুলে সকলে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিল।

স্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সৌরদীপ বরাবরই পড়াশোনায় ভালো। বেশিরভাগ সময়ই প্রথম দশের মধ্যে থাকত সে। এবারে মাধ্যমিকে সে স্কুলে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। ওই স্কুলেই বিজ্ঞান নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে সৌরদীপ। তার লক্ষ্য আগামী দিনে ডাক্তার হওয়ার। সমস্ত প্রতিকূলতা জয় করবে। দৃঢ় বিশ্বাস সৌরদীপের। ছেলের কথা বলতে গিয়ে গলা ভারী হয়ে এসেছিল সতীশবাবুর। সব সময় স্কুলের মাস্টারমশাইরা পাশে আছেন বলে তিনি জানান। বিধায়কের কিছু সাহায্য পেলেও প্রশাসনের কোনও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানিয়েছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুনাভ বাজানী বলেন, "ও আমাদের স্কুলের সত্যিই যেন সৌরদীপ, নামে এবং কাজেও।"

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • চার বছর আগে স্কুলের বাৎসরিক স্পোর্টস দেখার সময় জ্যাভলিনের ফলা ঢুকে গিয়েছিল মাথার বাঁদিকে।
  • সেই ঘটনার পর প্রায় দু'মাস ভর্তি ছিল কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে।
  • ওই কিশোরের মাথায় হয় তিনটি অস্ত্রোপচার। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও পক্ষাঘাতে বিছানায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়।
Advertisement