দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: নদীতে কাঁকড়া ধরার পর নৌকায় শুয়ে শুয়ে গল্প করাই কাল হল। সুন্দরবনের (Sunderban) জঙ্গল থেকে বাঘ বেরিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নৌকায়। কুলতলির মৎস্যজীবী লক্ষ্মীন্দর সাঁপুইয়ের মাথায় কামড় বসিয়ে জঙ্গলে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু অপর দুই সঙ্গী অসম সাহসিকতায় ভর করে রুখে দাঁড়ান। রয়্যাল বেঙ্গলের (Royal Bengal Tiger) চোখে চোখ রেখে লড়াই করে অবশেষে সঙ্গীকে বাঘের পেটে চলে যাওয়া থেকে বাঁচান। তাঁদের এই লড়াইয়ের কাহিনি এখন গ্রামে সকলের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘটনা সোমবারের। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কুলতলির (Kultali) দেউলবাড়ির চিতুরিমুখ এলাকার বাসিন্দা সৌমিত্র সরদার, লক্ষ্মীন্দর সাপুই, ইব্রাহিম শেখ সুন্দরবনের বেণীফেলি জঙ্গলের কাছে নদীতে কাঁকড়া শিকার করতে গিয়েছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২ টার পর কাঁকড়া ধরা হয়ে গেলে তাঁরা নৌকায় ফিরে শুয়ে শুয়ে গল্প করছিলেন। সেই সময়ে আচমকাই জঙ্গল থেকে বাঘ বেরিয়ে এসে তাঁদের নৌকায় আক্রমণ করে। লক্ষ্মীন্দরের মাথার দিক থেকে আঘাত করে। মাথায় কামড় বসিয়ে জঙ্গলে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বাঘটি।
[আরও পড়ুন: রেললাইনে বসেই মোবাইল গেমে মজে, অশোকনগরে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত ২ কিশোর]
কিন্তু বাঘের চোখে চোখ রেখে সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন লক্ষীন্দরের দুই সঙ্গী সৌমিত্র ও ইব্রাহিম। তাঁরা লাঠি, বৈঠা নিয়ে বাঘের সামনে রুখে দাঁড়ান। শিকার ছেড়ে জলে ঝাঁপিয়ে সাঁতরে জঙ্গলে চলে যায় বাঘটি। সাহসের সঙ্গে লড়াই করে বন্ধুর প্রাণ বাঁচান। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে সোমবার রাতে নিয়ে আসা হয় কুলতলির জয়নগর গ্রামীণ হাসপাতালে। ইব্রাহিম শেখ বলেন, ”লক্ষ্মীন্দরের জীবন বাঁচিয়ে ফিরতে পারব ভাবিনি। আমরা নৌকায় ঘুমিয়ে পড়লে বাঘ তিনজনকেই নিয়ে যেত।”
[আরও পড়ুন: চরম আর্থিক অনটন, মা-বাবা ও বিবাহিত বোনকে খুন করে আত্মহত্যার চেষ্টা যুবকের]
এভাবে শিকার করতে গিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেই থাকে সুন্দরবনে। কখনও বাঘের হামলায় মৎস্যজীবীদের মৃত্যু হয়, কখনও সাহস ও বুদ্ধিতে ভর করে দক্ষিণরায়ের সঙ্গে লড়াই করে নিজেকে বাঁচাতে পারেন। তবে তেমন ঘটনা বিরলই। লক্ষীন্দরকে বাঁচানোর ঘটনা কিন্তু নতুন করে অনুপ্রাণিত করেছে সকলকে।