সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: টানা দেড় দিন পর দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (SBSTC) বিহারগামী নিখোঁজ দুটি বাস ফিরে এলো। আর ফিরেই নিখোঁজ রহস্য উদঘাটন করলেন দুই চালক। তাঁদের অভিযোগ, বিহারের জামুই এলাকার পুলিশ যাত্রীদের বারাণসী নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করেছে। প্রতিবাদ করলে পুলিশের উসকানিতেই যাত্রীরা তাঁদের মারধর করেছে বলেও অভিযোগ। শেয পর্যন্ত নিজেদের খরচে তাঁরা ৭৭ জন পরিযায়ী শ্রমিককে বারাণসী পৌঁছে দিয়ে তবেই ছুটি মিলল। মঙ্গলবার দুপুরে ফিরে এলেন তাঁরা।
গত ৯ মে বর্ধমান ডিপোর দুটি বাস দুর্গাপুর ও আসানসোল থেকে ৭৭ জন পরিযায়ী শ্রমিককে নিয়ে বিহারের জামুইয়ের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়। ১০ মে জামুই পৌঁছন তাঁরা। কিন্তু যাত্রীরা অধিকাংশ উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বাসিন্দা হওয়ায় সেখানেও যেতে বাধ্য করে স্থানীয় পুলিশ বলে অভিযোগ। পুলিশেরই উস্কানিতে যাত্রীরা বাসের এক চালক মোল্লা ওয়াহিদ হককে মারধর করে তাঁর মোবাইল- সহ ব্যাগ কেড়ে নেয়। জখম হন তিনি। আরেক চালক গোপালচন্দ্র মাজির মোবাইলে চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় তা বন্ধ হয়ে যায়। তাই জামুই পৌঁছনোর পর আর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
ওই ৭৭ জন পরিযায়ী শ্রমিককে জামুইয়ে নামিয়ে দেওয়ার কথা ছিল দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাস দুটির। কিন্তু যাত্রীরা বারবার তাঁদের বারাণসী পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার দাবি করতে থাকেন। স্থানীয় পুলিশও চাপ তৈরি করে বলে অভিযোগ। উপায়ন্তর না দেখে এরপর ওই দুই বাসচালক এটিএম থেকে নিজেদের টাকা তুলে ২৫০ লিটার ডিজেল ভরে বারাণসীর উদ্দেশে রওনা হয়। ১১ মে বিকালে সেখানে পৌঁছায়। তখনও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কারণ, একজনের মোবাইল বন্ধ, আরেকজনের মোবাইল ছিনতাই হয়ে গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: ১০০০ কিমি হেঁটে বাংলা-ওড়িশা সীমান্তে অভুক্ত পরিযায়ী শ্রমিকরা, বাসের ব্যবস্থা করল রাজ্য]
এদিকে, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও দুটি বাসের খোঁজ না পেয়ে হুলস্থুল পড়ে যায় দুর্গাপুর প্রশাসন ও দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের কর্তাদের মধ্যে। তাঁরা জামুইয়ের পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেও গাড়ির হদিশ পেতে ব্যর্থ হন। এরপর বিশেষ গাড়ি নিয়ে আঞ্চলিক পরিবহণ দপ্তরের চারজন বেরিয়ে পড়েন বাস খুঁজতে। COVID স্পেশ্যাল বাস হওয়ায় টোল প্লাজায় বাসের নম্বর লিপিবদ্ধ হয়নি। ফলে খুঁজতে সমস্যা হয়। সবশেষে সোমবার রাত ১২টা নাগাদ বিহারের হাজারিবাগের কাছে বরি টোল প্লাজায় হদিশ মেলে এই দুই বাসের।
সেখান থেকে মঙ্গলবার দুপুরে সিটি সেন্টার ঢোকে বাস দুটি। বিপদের সময় উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে উদ্ধার পাওয়া এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বার্থের দিক ভেবে তাঁদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার মতো প্রশংসনীয় কাজের জন্য দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক অনির্বাণ কোলে ফুল, মিষ্টি দিয়ে চালকদের সংবর্ধনা জানান। এই দেড়দিনের খরচ বাবদ তাঁদের হাতে ১৮ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। এই ঘটনার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভিন রাজ্যে গাড়ি যাতায়াতে পরিবহণ দপ্তরের অনুমতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ে আলোচনার পরই ছাড়া হবে বলে জানা গিয়েছে। এসবিএসটিসির এমডি কিরন কুমার গোদালা জানান, “ পরিবহণ দপ্তরে পুরো ঘটনা জানানো হয়েছে। দপ্তর যা নির্দেশ দেবে সেইমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
[আরও পড়ুন: সুতির ৩ করোনা আক্রান্তের দিল্লি যোগ নিশ্চিত করল স্বাস্থ্য দপ্তর, নজরে অ্যাম্বুল্যান্স চালক]
The post উদ্বেগের অবসান, ফিরল পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে নিখোঁজ ২ সরকারি বাস appeared first on Sangbad Pratidin.
