নন্দন দত্ত, সিউড়ি: মহম্মদবাজারের ব্যবসায়ী খুনে নতুন মোড়। সিজা কার? সন্দীপের না সুজয়ের? তা নিয়ে জটিলতাতেই কি খুন? ক্রমশ বাড়ছে ধোঁয়াা। শুক্রবার নিজেদের হেফাজতে পেয়ে ব্যবসায়ী খুনে মূল অভিযুক্ত সন্দীপ মাহারাকে দীর্ঘ জেরা করেন জেলার পুলিশ কর্তারা। একইসঙ্গে ডেকে পাঠানো হয় সিজাকে (নাম পরিবর্তিত)। সিজা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এটা তাঁর পেশাগত গোপনীয়তা। দু’জনেই তাঁর খদ্দের। সন্দীপ ধরা পড়তেই ব্যবসায়ী খুনে নতুন সম্ভাবনার সন্ধান পেল মহম্মদবাজার থানার পুলিশ।
গত ২৫ অক্টোবর ভোর রাতে বাড়ি যাওয়ার পথে চন্দ্রপুর ও সেরেন্ডার মাঝে খুন হন সুজয় মণ্ডল। তাঁকে গুলি করে খুনের অভিযোগ উঠেছিল ব্যবসার অংশীদার তথা বন্ধু সন্দীপের বিরুদ্ধে। পুলিশের হাতে ধরা পড়তেই সন্দীপ কার্যত স্বীকার করে অভিযোগ। জানায়, সে নিজে হাতে বন্ধুকে গুলি করে খুন করেছে। কিন্তু কেন? তা জানতে সন্দীপকে হাতে পেয়ে সিউড়িতে পুলিশের নিজস্ব ডেরায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় থেকে জেলা পুলিশের তদন্তকারী অফিসাররা। সাঁইথিয়া থেকে ডেকে পাঠানো হয় সিজাকে। মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার বছর পঁয়ত্রিশের মেয়েটির প্রেমে পড়েছিলেন সুজয়। পুলিশের খবর, তাকে রীতিমতো ভরণপোষণ দিয়ে সাঁইথিয়ার একটি লজে রাখে সুজয়। ছিল নিয়মিত যাতায়াত। বন্ধুর গতিবিধি লক্ষ্য করে একদিন সেখানে গিয়ে হাজির হয় সন্দীপ। পরবর্তীতে এক ফুল দো মালির চিরাচরিত চিত্রনাট্য গড়ে ওঠে সিজাকে ঘিরে। সিজা সেটা বুঝতেও পারে। কিন্তু পেশার খাতিরে কোনও খদ্দেরকেই সে ছাড়তে পারে না!
পুলিশের কাছে খবর, এই সিজাকে ঘিরে শেষের দিকে দুই বন্ধুর মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। বিশেষ করে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অপরাধে সুজয় যখন জেলবন্দি, তখন সিজার খুব কাছের হয়ে ওঠে সন্দীপ। কারণ সন্দীপের বাড়িতে তাঁর নাবালিকা মেয়ে ছাড়া কেউ নেই। স্ত্রী ছেড়ে চলে গিয়েছে্ন অনেকদিন। পুজোর আগে জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে সুজয় তা মেনে নিতে পারেনি। পুলিশের অনুমান, তখনই দুই বন্ধু দু’জনকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। কারণ দু’জনেই মহম্মদবাজারের ওই পাথর খাদান এলাকায় নানা ধরনের কারবার করত। দু’জনের কাছেই অবৈধ অস্ত্র থাকত। খুনের আগের রাতে সুজয়কে তার বাড়ি চন্দ্রপুর থেকে ডাকে সন্দীপ। তার গাড়িতে চেপেই সুজয়ের মাসির বাড়ি গদাধরপুরের কাছে যায়। রাতে নিরামিষ খায়। সুজয় গাড়ি চালিয়ে বাড়ির দিকে মধ্যরাতে রওনা দেয়।
মহম্মদবাজারে শেওড়াকুড়ির কাছে গাড়ির ভিতরে দু’জনে মদ্যপান করে। তার আগে সিজার কাছে দু’জনে গিয়েছিল কিনা তার খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। নাকি খুনের আগে সেই গাড়িতেই সিজা ছিল। কারণ সুজয়ের গাড়ির ভিতর থেকে দামি মদের বোতল উদ্ধার হয়। পুলিশ জানতে চাইছে সিজাকে ঘিরে কি দুই বন্ধুর টানাপোড়েনে নেশার ঘোরে এই খুন? নাকি ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব? পুলিশের দাবি, তারা তদন্ত অনেকটা গুটিয়ে এনেছে। শীঘ্রই প্রকাশ্যে আসবে গোটা বিষয়টা।