অর্ণব দাস, বারাসত: রাজ্যজুড়ে চলছে এসআইআরের শুনানি (SIR Hearing in West Bengal) পর্ব। তা ঘিরে মানুষের চূড়ান্ত ভোগান্তির অভিযোগ! বিশেষ করে অসুস্থ, প্রবীণ নাগরিকদের ভোগান্তির শেষ নেই। পরিস্থিতি এমনই যে, মোটা টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া করে হেয়ারিংয়ে যেতে হচ্ছে অসুস্থ বৃদ্ধাদের। কারোর আবার কোলে একরত্তি শিশু নিয়ে লাইনে অপেক্ষা করতে হল ঘন্টার পর ঘন্টা। সোমবার বারাসত ১ ব্লকের ছোট জাগুলিয়া আইটিআই কলেজে এমনই চূড়ান্ত অমানবিকতার ছবি ধরা পড়ল! যা নিয়ে সরব হয়েছেন বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়, হিয়ারিংয়ে আসা মানুষদের কাগজ জমা নিয়ে প্রমাণ হিসেবে কোনও নথি ফেরত না দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, বারাসত ও মধ্যমগ্রামের হিয়ারিং হচ্ছে ছোট জাগুলিয়া আইটিআই কলেজে। সেখানেই এদিন শুনানিতে এসেছিলেন বারাসতের হৃদয়পুর কৈলাশনগরের বাসিন্দা বছর ৮৫-র শোভারানী ভৌমিক ও বছর ৬৬-র বাবলি দত্ত। বয়সের ভারে অসুস্থ শোভারানীদেবীকে গাড়িতে করে হিয়ারিংয়ে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর জামাই রতন রায়। লাইনে দাঁড়ানোর ক্ষমতাটুকু না থাকায় গাড়িতে বসেই সমস্ত নথিতে স্বাক্ষর করানো হয় তাঁর। জামাই রতন রায় বলেন, "যাতায়াতের জন্য পাঁচ হাজার করে দশ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া করে আসতে হয়েছে। টাকা তো নির্বাচন কমিশন দেবে না। হয়রানির একটা শেষ থাকে। অসুস্থ মানুষকে এতদূর নিয়ে আসতে হয়েছে। রাস্তায় কিছু হয়ে গেলে কোনো উপায় ছিল না। এতদিন ভোট দেওয়ার প্রসঙ্গে এই অব্যবস্থা মেনে নেওয়া যায় না।"
১০ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া করে এসেছেন অসুস্থ শোভারানীদেবী।
অন্যজন বাবলিদেবীও ভীষণ অসুস্থ। তাঁর পেসমেকার বসানো, ভালভ রিপ্লেসমেন্ট করা এবং পায়ে রড বসানো আছে। তাঁকেও এদিন গাড়ি করে শুনানিতে আসতে হয়েছে। শুনানি কেন্দ্রের কর্মীরাই এসে গাড়ির ভেতরে তাঁর কাগজপত্র সংগ্রহ করলেও ক্ষোভ উগড়ে মেয়ে বলাকা দত্ত জানিয়েছেন, "মা একদমই হাঁটাচলার করতে পারেন না। আমারও অফিস বাদ দিয়ে এদিন মাকে নিয়ে আসতে হয়েছে। বিএলও'কে জানিয়েছিলাম, একথা জানালে বলেছিল যেভাবেই হোক কষ্ট করে নিয়ে আসতে হবে। আমি চাকরি করি। কাজে না গিয়ে মাকে নিয়ে আসতে হয়েছে। এটা খুবই হয়রানি। অসুস্থ অবস্থায় মা'ও এনিয়ে খুব চিন্তিত।"
কোলে একরত্তি শিশু নিয়ে শুনানির লাইনে রিম্পা মণ্ডল।
একরত্তি শিশুকে নিয়ে এদিন লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রিম্পা মণ্ডল ও শ্বেতা দেবনাথরা। তাঁরা জানিয়েছেন, "বাধ্য হয়ে সন্তান কোলে করে আমাদের হেয়ারিংয়ে আসতে হল। আর পারা যাচ্ছে না।" এদিন শুনানি কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল সুনীল মুখোপাধ্যায়। মানুষের এহেন পরিস্থিতি দেখে তিনি বলেন, "আমি ঘন্টা তিনেক শুনানি কেন্দ্রে ছিলাম। মানুষের দুর্ভোগ নিজে চোখে দেখেছি। হেয়ারিংয়ের নামে এরকম অমানবিক, অসভ্যতা আগে কখনও দেখিনি। হেয়ারিংয়ে শুধু কাগজ জমা নিচ্ছে, কোনও রিসিভ কপি দিচ্ছে না। জমা দেওয়া কাগজ হারিয়ে গেলে দায় কে নেবে। এই রকম অসভ্যতা করার মানে কি?" অন্যদিকে, আমডাঙায় এসআইআরের শুনানিতে এসে অসুস্থ হলেন আমডাঙার উড়ালা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব শ্যামলী ঘোষ। তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হল।
