শঙ্কর রায়, রায়গঞ্জ: বাড়িগুলো যেন খাঁ খাঁ করছে। ভিতরে লোকজন থাকলেও কোনও শব্দ নেই। দু’চারটে দোকানপাট খোলা। কিন্তু খরিদ্দার নেই। যানবাহন বলতে ট্রেকারই ভরসা। কিন্তু তাতেও যাত্রীদের আনাগোনা খুব একটা নেই। বৃহস্পতিবারের হাটেও অস্বাভাবিকভাবে লোকজন কম চোখে পড়ে। গোটা দাড়িভিট ভেঙে পড়েছে দুই যুবকের আকস্মিক মৃত্যুতে। তাই চারিদিক যখন শারদোৎসবের গন্ধে মাতোয়ারা। তখন দাড়িভিট গ্রামে শুধুই শূন্যতা। হাহাকার। পুজোর কোনও আঁচ পড়েনি সেখানে।
[গুলিবিদ্ধ শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তারক্ষী, তদন্তে পুলিশ]
গত বছরও দাড়িভিটে তিনটি সর্বজনীন দুর্গাপুজো হয়েছিল। কিন্তু এবার দুই তরুণকে অকালে হারিয়ে সারা গ্রাম যেন পাথর চাপা দিয়ে দিনরাত কাটাচ্ছেন। নেই কোনও উচ্ছলতা। তাপস বর্মন আর রাজেশ সরকারের মৃত্যু যেন এক লহমায় সব আনন্দ শুষে নিয়েছে। আর তাই সবচেয়ে প্রাচীন দাড়িভিট বাজারের সামনে মজুমদার পাড়ার সর্বজনীন দুর্গোৎসব। গ্রামের যেন ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু সেই পুজো বন্ধ। পুজোর উদ্যোক্তাদের দেখা নেই। তবে, কমিটির মানস সরকার বলেন, “চল্লিশ বছর ধরে দুর্গাপুজো হচ্ছে। কিন্তু এবার প্রথম পুজো হল না।”
[পুজোয় নাশকতার ছক! হুগলিতে উদ্ধার প্রচুর পরিমাণের অস্ত্র]
অন্যদিকে, দাড়িভিট রোড পাড়ার আয়োজনে দীর্ঘ বছর ধরে দুর্গাপুজো হয়ে আসছিল। কিন্তু এবার তাই সব বন্ধ। মাঠ খোলা পড়ে রয়েছে। কোন আয়োজন নেই। পুজো কমিটির কর্তা পবন সাহা কিংবা ছিদাম মাতব্বরদের কথায়, পুজো আবার কিসের। পুজোর জন্য মন দরকার। সেই মন মানসিকতাটাই শেষ হয়ে গেছে। তরতাজা দুই যুবক গুলিতে মরে গেল। তারপর পুজোর আয়োজনের কথা আর মাথায় নেই।”
[চতুর্থীতেও ভোগাবে ‘তিতলি’, বৃষ্টির আশঙ্কা দক্ষিণবঙ্গে]
আর নিহত রাজেশ সরকারের সুখানিভিটার বাড়িতে গত আট বছর ধরে ফি বছর দুর্গা পুজোর মাস খানেক আগে থেকে চলত নানা ব্যস্ততা। নিহত রাজেশের ভাই অমিত সরকারের কথায়, “দাদা ছিল পুজোর মূল উদ্যোক্তা। তা দাদা আর কোন দিন ফিরবে না। কিভাবে পুজো হবে আর।” নিহত রাজেশের বাবা নীলকমলবাবু কিংবা কাকা সুভাষবাবু কথায়, “এই পুজো আর কোন দিন হবে না।” আর রাজেশের মা ঝর্ণাদেবী কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘ছেলেকে নিয়ে পুজোয় যেতাম। কিন্তু, ছেলে নেই, আর কিসের দেবী পুজো?’’
