সৈকত মাইতি, তমলুক: জল জীবন মিশন প্রকল্পের পরিশ্রুত পানীয় জলেই বেগুন চাষ থেকে গরুর স্নান, বাসন মাজা, কাপড় কাচা - বাদ যাচ্ছে না কোনও কিছুই। ট্যাপ কলের মুখে বেআইনিভাবে পাইপলাইন জুড়ে পানীয় জলের এই অপব্যবহার রুখতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরই কড়া হল জনস্বাস্থ্য বিভাগ। গত চারদিনে প্রায় হাজার চারেক অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়াও শুরু করল পিএইচই দপ্তর। পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে নিয়েই জলের এই অপচয় রুখতে জেলা জুড়েই চলছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিশেষ এই অভিযান।
স্থানীয় ও প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ১১ লক্ষ ৬২হাজার পরিবার। তার মধ্যে ৫ লক্ষ ৬৪হাজার বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। জেলার পাশাপাশি রূপনারায়ণের জলকে পরিশ্রুত পানীয় জলে পরিণত করে কোলাঘাট ব্লক জুড়েও চলছে জীবন মিশন প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহ। এর জন্য মাথাপিছু দৈনিক ৫৫ লিটার জল বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু সেই হিসেবকে তোয়াক্কা না করেই দেদার পানীয় জলের অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। শীতের মরশুমেও রবি শস্য চাষে পিএইচই-র এই পানীয় জল ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এর জন্য কোথাও ট্যাপ কল, আবার কোথাও পাইপলাইন ছিদ্র করে সোজা সবজি খেতে জল সরবরাহ করা হচ্ছে। আবার, অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে বড় বড় রিজার্ভার ভরিয়ে পানীয় জলকে গরুর স্নান থেকে বাসন মাজা, কাপড় কাচার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পিএইচই-র এই প্রকল্প নিয়ে দপ্তরের মন্ত্রী, প্রধান সচিব এবং উচ্চ পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। মূলত জল জীবন মিশন প্রকল্পে কাজের গতিপ্রকৃতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠক হলেও মিটিংয়ে পানীয় জলের অবৈধ সংযোগের বিষয়টি উঠে আসে। বিষয়টি নিয়ে তাই দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তাতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পুলিশ ও প্রশাসনের যৌথ সমন্বয়ে শুরু হয় স্পেশাল ড্রাইভ।
পরিস্থিতি এমনই হয় যে, শনি ও রবিবার ছুটি বাতিল করেই জেলা জুড়ে চলে স্ক্রুটিনির কাজ। ইতিমধ্যেই গত পাঁচ দিনে অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযানে বেআইনি জলের লাইন কাটার পাশাপাশি প্রায় চার হাজারেরও বেশি এফআইআর দায়ের হয়। যার মধ্যে তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে প্রায় পাঁচ শতাধিক এফআইআরে ১৭৫ টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় দপ্তর। একইভাবে কোলাঘাটে ১০৫টি, পাঁশকুড়ায় ২০, চণ্ডীপুর ১৫, ময়না এবং নন্দকুমারে ২৫ টি করে জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় পুলিশ প্রশাসন। এছাড়াও রামনগর-১ ব্লকে ৩০৮জন, নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে ২৮০ জন, দেশপ্রাণ ব্লকে ২৮২জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে অভিযানে নেমেছে পিএইচই দপ্তর। যা নিয়ে রীতিমত শোরগোল পড়েছে জেলা জুড়ে।
জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি জানিয়েছেন, পানীয় জলের অপব্যবহার রুখতে জেলা জুড়ে অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় চার হাজারের বেশি থানায় অভিযোগ হয়েছে। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পিএইচই দপ্তর ওই সকল অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে।