পলাশ পাত্র, তেহট্ট: জমিদারির পাঠ চুকেছে অনেক আগেই৷ কিন্তু, জমিদারি গেলেও সাবেকি ঘরানার মাটির এক চালার কনকদুর্গার কাছে মনস্কামনা পূর্ণ করতে যমশেরপুরের বাগচিদের সীমান্তের বাড়িতে এখন ভিড় জমান বহু মানুষ৷ বাগচিবাড়ির পুজোকে কেন্দ্র করে এখনও মিলেমিশে যায় দুই বাংলা৷

[‘ছেলেই যখন নেই, তখন কীসের পুজো?’ উৎসবেও শোকের ছায়া দাড়িভিটে]
নদিয়া গবেষক মোহিত রায়ের ‘রূপে রূপে দুর্গা’ বই থেকে জানা যায়, স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিতা দুর্গার মাটির মূর্তির লোকায়ত নাম কনকদুর্গা। পুজোকে কেন্দ্র করেই দেশে-বিদেশে থাকা বাগচি পরিবারের সদস্যরা এই জমিদার বাড়িতে মিলিত হয়। রবীন্দ্রভাব ধারার কবি ছিলেন কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচি। এই জমিদার বাড়িতে বসেই তিনি লেখালিখি করতেন৷ আজও দুর্গা মন্দির থেকে বাগানের মধ্যে দিয়ে চাঁদ দেখা যায়৷ গানের বিখ্যাত সেই দীঘিও রয়েছে।
[এবার পুজোয় আপনিও দুর্গা কিংবা অসুর, জানেন কীভাবে?]
জানা গিয়েছে, বাগচি বাড়ির পুজোর প্রতিষ্ঠাতা রামগঙ্গা ভদ্র হোগলবেড়িয়ার সুন্দলপুরের জামাই ছিলেন। যমশেরপুরে তখন জঙ্গল ছিল। এলাকায় ব্রাহ্মণ না থাকায় ঘোষেরা রামগঙ্গাকে গুরু করে যমশেরপুরে আনেন। বাগচিরা অনেক আগেই ঢাকা থেকে সুন্দলপুরে বসতি গড়ে তোলেন৷ বিশাল জমি অধিগ্রহণ করে জমিদার হয়ে ওঠেন। এই সময় রামগঙ্গা দুর্গা পুজো শুরু করেন। হালকা হলুদ রঙের দেবী দুর্গার বাহন সিংহের রঙ এখানে সাদা, অসুর সবুজ, গণেশ গোলাপি ও কার্ত্তিক হালকা হলুদ রঙের। ডাকের সাজে সজ্জিত করে মাতৃমুখী দেবীকে কয়েকশো ভরি সোনার গয়না পরানো হত৷ পরে ডাকাতির ভয়ে গহনা পরানো বন্ধ হয়ে যায়৷ পুজোর কটা দিন দেবীকে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়৷ খিচুড়ি, পোলাও, লুচি, বোদে, মিষ্টি, পাঁচ ভাজা, তরকারি ভোগ দেওয়া হয়৷ দশমীর দিন পান্তা ভাত, কচুর শাক ও ইলিশ মাছ খাওয়া হয়৷ সন্ধীপুজোর দিন নারকেল পায়েস, সমস্ত সবজি মিশিয়ে রসাঝোলের খ্যাতি রয়েছে। বৈষ্ণবমতে পুজো হওয়ায় প্রথম থেকেই পশু বলি হয় না এখানে।
[উমার স্বপ্নাদেশে এই বাড়ির বউরাই দেবী, কেন জানেন?]
তবে, কুমড়ো বলি হয়। একসময় গোটা গ্রামের মানুষ প্রসাদ পেতেন৷ এখন সামর্থ্য কুলোয় না। তবে, যারা আসেন, তাঁরা প্রসাদ পান। বর্তমানে বাড়ির পুজো কর্তাদের অন্যতম শেখর বাগচি বলেন, ‘‘পূর্ব পুরুষদের মুখে শুনেছি, আমাদের বাড়ি থেকে স্বদেশীদের পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছিল। তাই বাঘাযতীন থেকে অনেকেই এসেছেন। আবার রাতের অন্ধকারে তাঁরা চাদর জড়িয়ে চলে যেতেন। আমার মা ছিলেন কবি, নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাতনি। সেই সূত্রেও অনেক বিখ্যাত মানুষ আসতেন। পুজোটা আমরা আগের মতো নিয়ম, নিষ্ঠা মেনেই করি। আজও কাঁটাতারের ওপার থেকে মানুষ ভক্তি, শ্রদ্ধার টানে কনকদুর্গার থানে আসেন। দশমীর দিন রীতি মেনে দেবীকে কাঁধে নিয়ে কিছুটা দূরে কালীতলার বিলে বিসর্জন দেওয়া হয়৷ কৃষ্ণনগর থেকে প্রায় ১০০কিমি দূরত্বে কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচির ভিটে মাটিতে আজও কনকদুর্গাকে দেখতে প্রচুর মানুষ আসেন।’’
The post পান্তা ভাতের সঙ্গে ইলিশ খাইয়ে উমাকে বিদায় জানান কবি যতীন্দ্রমোহনের পরিবার appeared first on Sangbad Pratidin.