অর্ণব দাস, বারাকপুর: বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের আবহে জেলবন্দি ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণর আইনজীবীর সঙ্গে বেশ খানিকক্ষণ কথা বললেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। মঙ্গলবার দুপুরে বারাকপুরে আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের ছেলের বাড়িতে বৈঠক শেষে তাঁরা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান বর্ষীয়ান আইনজীবী। কুণাল ঘোষের কাছে তিনি সেই ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। কুণাল ঘোষ বলেন, ''মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ইস্যুতে যা যা মন্তব্য করেছেন, তা রবীন্দ্রবাবুর ভালো লেগেছে। সেই জন্যই উনি মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে বলেছেন।'' কিন্তু সমাধানের জন্য এ রাজ্যের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। সে বিষয়ে কেন্দ্র সরকারকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা রবীন্দ্রবাবুকে বারবার বোঝালেন কুণাল ঘোষ।
বারাকপুরে রবীন্দ্র ঘোষের ছেলের বাড়িতে কুণাল ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।
হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশে যে হিন্দু নির্যাতনের ধারাবাহিক ঘটনা ঘটে চলেছে, তার বিরোধিতায় সরব হয়েছে রাজ্যের শাসকদল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বাংলাদেশ ইস্যুতে প্রতিবাদ মিছিলও হয়েছে রাজ্যজুড়ে। এসবের পাশাপাশি বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর আবেদন জানিয়েছেন কেন্দ্রের কাছে। তাঁর মতে, এই মুহূর্তে রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপ একান্ত জরুরি। এদিকে, সে দেশে ইসকনের মতো হিন্দু ও সেবামূলক সংগঠনের উপর আক্রমণ নেমে আসার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল। চিন্ময় কৃষ্ণর জামিনের পক্ষেও সরব হয়েছে শাসকদল। বারবার তা পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্নও তোলা হয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে চিন্ময় প্রভুর জামিন শুনানির ঠিক আগেই খবর মেলে, ইসকনের জেলবন্দি সন্ন্যাসীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে না বলে অভিযোগে বিক্ষোভ দেখান সেখানকার হিন্দু সদস্য়রা। এমন পরিস্থিতিতে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসা চিন্ময় প্রভুর আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের সঙ্গে কুণাল ঘোষের সাক্ষাৎ এবং আলোচনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আলোচনার সময় বর্ষীয়ান আইনজীবী জানান, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি দেখা করতে চান। বাংলাদেশে হিন্দুদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে চান। এনিয়ে কুণাল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ''আমরা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতিবেশী রাজ্য। ফলে আমাদের উপর প্রভাব বেশি পড়ে, মানুষের আবেগে আঘাত লাগে। তাই আমাদের সমস্যাটা বেশি। কিন্তু কী কী করতে হবে, সেটা কেন্দ্রকে ঠিক করতে হবে। রাজ্য বারবার বলেছে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের সমর্থন করবে। আমরা বাংলাদেশের উদ্বেগজনক ঘটনায় চিন্তিত হতে পারি, কিন্তু রাজ্যের সরাসরি কিছু করার নেই।''
তাতে কুণাল ঘোষ তাঁকে বোঝান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা রাজ্য সরকার বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছুই করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে যা করার, কেন্দ্র সরকারকেই করতে হবে এবং রাজ্যের শাসকদল কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্তের পাশে থেকে সমর্থন দেবে। তা মেনে নিয়েছেন রবীন্দ্রবাবু। আগামী ২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম আদালতে চিন্ময় প্রভুর জামিন মামলার শুনানি। ওইদিন কি উপস্থিত থাকবেন? এর উত্তরে রবীন্দ্রবাবু জানালেন, তিনি অসুস্থ। খুব চেষ্টা করবেন সময়ের মধ্যে ফিরে আদালতে উপস্থিত হওয়ার।