অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: জল নেই। বিদ্যুৎ নেই। রাস্তায় বিরাট ফাটল। ভাঙছে বাড়ি। এর মধ্যেই বিজ্ঞানীদের সতর্কতা, বিপদ ক্রমশ বাড়ছে হাওড়ার। ভূবিজ্ঞানীরা আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে গোটা এলাকা। সেই একই কথা শোনা গেল ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট এয়ার অ্যান্ড ওয়াটারের সভাপতি সাধনকুমার ঘোষের গলাতেও। সাফ জানিয়ে দিলেন, বেলগাছিয়ার ভাগাড় অবিলম্বে বন্ধ না করলে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিরাট এলাকাজুড়ে ধস নামতে পারে।

রবিবার বেলা এগারোটা নাগাদ সাধনবাবুর নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী বেলগাছিয়া ভাগাড়ের ধস বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এরপরই সাধনবাবু বলেন, "এই এলাকায় মাটির সহন ক্ষমতা চূড়ান্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে এই ভাগাড় বন্ধ না করলে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ধস নামতে পারে এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে।" বিজ্ঞানীদের আরও প্রশ্ন, সমস্ত পরিবেশ সংক্রান্ত আইন কীভাবে অবহেলা করা হল? জৈব-অজৈব আবর্জনা আলাদা না করে কীভাবে তা একই জায়গায় ফেলা হচ্ছিল, সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না বিজ্ঞানীদের।
গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো শনিবার বিকেল থেকে হাওড়ায় নতুন সমস্যা দেখা যায়। জানা যায়, মাটি থেকে বেরচ্ছে মিথেন গ্যাস। কিন্তু কেন? ভূবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ওই ভাগাড়ে দীর্ঘদিন ধরে আবর্জনা ও পশুপাখির মৃতদেহ জমা হয়েছে। এবার পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, প্রাণীদেহের রস শুষে নেওয়ার ক্ষমতা কার্যত হারাতে বসছে মাটি। ফলে মাটির তলা ফেঁপে গিয়েছে। আর মাটির নীচে ফাঁকা জায়গা থাকলে তৈরি হয় মিথেন গ্যাস! এত অবধি তবুও ঠিক ছিল! কিন্তু গঙ্গা কাছে হওয়ায় নদীর জল মিশছে মিথেন গ্যাসের সঙ্গে। তৈরি হচ্ছে বিপজ্জনক পরিস্থিতি। তাতেই আশঙ্কা ধসে যেতে পারে গোটা এলাকা।
ভূবিজ্ঞানী সুজীব কর বলছেন, “ভাগাড়ে পড়ে থাকা পচাগলা দেহরস এলাকার মাটিকে নষ্ট করে দিয়েছে। ফলে মাটির তলা ফেঁপে গিয়ে ওখানে মিথেন গ্যাস ও গঙ্গার জল ঢুকে গিয়েছে। যার জেরে যে কোনও সময় ভাগাড় সংলগ্ন এলাকা মাটির তলায় চলে গিয়ে বড়সড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। প্রশাসনের উচিত খুব দ্রুত মাটিতে গহ্বর তৈরি করে মিথেন গ্যাস বার করা। তবেই বড়সড় বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।”