shono
Advertisement
SIR in Bengal

কুলটির নিষিদ্ধপল্লিতে খোঁজ নেই বহু ভোটারের, ঘুরে ঘুরে হয়রান বিএলও-রা, উঠছে প্রশ্ন

এই ঘটনা কুলটির নিষিদ্ধপল্লি লছিপুর ও চবকা এলাকায়।
Published By: Kousik SinhaPosted: 12:02 PM Dec 01, 2025Updated: 02:31 PM Dec 01, 2025

স্টাফ রিপোর্টার, আসানসোল: কুলটির নিষিদ্ধপল্লি এলাকায় খোঁজ নেই বহু ভোটারের। বাড়ি বাড়ি ঘুরেও ভোটার তালিকায় থাকা সেইসব ভোটারদের হদিশ পাচ্ছেন না বিএলওরা (BLO)। বুথ, পাড়া, বাড়ি এক থাকলেও সেখানে নেই ২০০২ এর ভোটাররা। তাঁরা কারা? তাঁরা এখন কোথায়? বলতে পারছেন না সেই বাড়ির বর্তমান বাসিন্দারা। এই ঘটনা কুলটির (Kulti) নিষিদ্ধপল্লি লছিপুর ও চবকা এলাকায়। অভিযোগ, এই 'নিখোঁজ' ভোটাররা আসলে অস্তিত্বহীন অথবা বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী, যাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়।

Advertisement

কুলটির লছিপুর যৌনপল্লি এলাকায় যখন বুথ লেভেল অফিসাররা সমীক্ষার কাজে যান, তখন তাঁরা দেখেন ভোটার তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও বহু মানুষ ওই নির্দিষ্ট ঠিকানায় বসবাস করছেন না। স্থানীয় সূত্রে খবর, দীর্ঘ সময় ধরে এই ভোটারদের কোনও হদিশ নেই। অথচ বছরের পর বছর ধরে তাঁদের নাম তালিকায় রয়ে গিয়েছে। শুধু বিএলও নয়, বিএলএ-২-রাও কিছু বলতে পারছেন না ওই সব নিখোঁজ ভোটার নিয়ে। ১১৬ নম্বর বুথের বিএলও মহম্মদ এজাজ আহমেদ জানান, তাঁর বুথে ৯৯৫ জন ভোটার থাকলেও ৮৪ জনের কোনো খোঁজ নেই। তিনি ৪-৫ বার ওই বাড়িগুলিতে গিয়েছেন। জানতে পেরেছেন পুরানো ভাড়াটিয়ারা চলে গেছেন। নতুনরা তাঁদের চেনেন না। স্থানীয় বাসিন্দারাও বলতে পারছেন না তাঁরা কোথায় গেছেন। বিষয়টি ইআরও ও জেলা শাসককে জানানো হয়েছে।

১১৩ নম্বর বুথের বিএলও দেব কুমার জানান, তাঁর ৮১৪ জন ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬০-৭০ জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিষিদ্ধপল্লি এলাকা হওয়ায় অনেকে ভয়ে বা অন্য কারণে সামনে আসছেন না বলে তাঁর ধারণা। তাই 'খোঁজ' মিলছে না। নিষিদপল্লি এলাকার ১১৪ নম্বর বুথে ভোটার ৭৮৭ জন। কিন্তু খোঁজ নেই ৬০ জনের। দুর্বারের সদস্যরা এই সমীক্ষায় বিএলও-দের সাহায্য করছেন। দুর্বারের ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর রবি ঘোষ জানান, ''মুর্শিদাবাদ, বনগাঁ বা বীরভূম থেকে আসা অনেক যৌনকর্মী এখানে কাজ করলেও তাঁরা নিজের গ্রামের বাড়িতে ভোট দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তাই এখানে ফর্ম পূরণ করছেন না।'' তিনি আরও জানান, ''ম্যাপিংয়ের ভয়ে বা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী তকমা লাগার ভয়ে কেউ ফর্ম তুলছেন না, এমনটা নয়। প্রশাসন মাইকিং করছে। তাঁরাও নিখোঁজদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। নির্বাচন কমিশন সময়সীমা বাড়িয়েছে, এই সময়কালে তাঁদের নিশ্চয় খোঁজ মিলবে।''

ইতিমধ্যে ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, "কুলটি বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হওয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস পরিকল্পনামাফিক ১০-২০ হাজার ভুয়া ভোটারের নাম তালিকায় ঢুকিয়ে রেখেছে ভোট জেতার জন্য।” তাঁর কটাক্ষ, “এসআইআরের ফলে সব ভূত ধরা পড়ছে। ভূত ছাড়া তৃণমূলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।"

ভুয়া ভোটারের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল জেলা সম্পাদক মীর হাসিম বলেন, "এসআইআর (SIR in Bengal) নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। যাঁদের পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের মধ্যে অনেকে মারা গিয়েছেন। এলাকার মেয়েদের বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে গিয়েছেন। অথবা কেউ কাজের সূত্রে বাইরে আছেন।” তৃণমূল নেতার কথায়, "মৃত বা স্থান পরিবর্তনকারীদের নাম বাদ যাওয়াটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, একে ভুয়া ভোটার বলা ঠিক নয়।" তৃণমূলের মতে, নিষিদ্ধপল্লীর মতো এলাকায় জনসংখ্যার একটি বড় অংশ ফ্লোটিং পপুলেশন বা ভাসমান। জীবিকার প্রয়োজনে মহিলারা আসেন এবং কিছুদিন পর স্থান পরিবর্তন করেন বা নিজের বাড়িতে ফিরে যান। সেই কারণেই সমীক্ষার সময় অনেককে পাওয়া যাচ্ছে না, এর সঙ্গে ভুয়া ভোটারের কোনও সম্পর্ক নেই। অন্যদিকে প্রশাসন সূত্রের খবর, কমিশনের নিয়ম মেনেই যাচাই প্রক্রিয়া চলছে। যাঁদের পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের বিষয়ে নির্দিষ্ট বিধি মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। ভুয়া ভোটারদের তালিকায় নাম থাকবে না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • কুলটির নিষিদ্ধপল্লি এলাকায় খোঁজ নেই বহু ভোটারের।
  • বাড়ি বাড়ি ঘুরেও ভোটার তালিকায় থাকা সেইসব ভোটারদের হদিশ পাচ্ছেন না বিএলওরা।
  • ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
Advertisement