সৈকত মাইতি, তমলুক: ন্যায্য চাকরির দাবিতে রাস্তায় কাটিয়ে দেওয়ার হাজারটি দিন। প্যানেলভুক্ত হয়েও মেলেনি চাকরি। আর তাই আন্দোলনের হাজারতম দিনে SLST চাকরিপ্রার্থীদের দাবি আরও জোরদার হয়েছে। নিজের দীর্ঘ চুল বিসর্জন দিয়ে, মাথা নেড়া করে চাকরি চাওয়া মেয়েটির মুখ শনিবার কিছুটা সময়ের জন্য হলেও ঝাঁকুনি দিয়েছে গোটা শহরকে। নতুন করে বেকারত্বের জ্বালা উপলব্ধি করিয়েছে। তিনি রাসমনি পাত্র। পূর্ব মেদিনীপুরের (East Midnapore) ভোগপুরের বাসিন্দা। এক হাজার দিন ধরে চাকরির দাবিতে রোজ কলকাতা-ভোগপুর যাতায়াত করা সংগ্রামী মেয়ে। শেষমেশ নিজের চুলের বিনিময়ে যেন চাকরি চাইছেন তিনি! মেয়ের এই পদক্ষেপের পর কী প্রতিক্রিয়া পরিবারের? মা-বাবা বলছেন, এত কিছুর পরও তো হতাশা ছাড়া কিছুই তো নেই। সরকার একটু মানবিকভাবে দেখুক বিষয়টি।
SLST চাকরিপ্রার্থী রাসমনি পাত্র। ২০১৬ সালের SSC পরীক্ষায় প্যানেলভুক্ত(SSC Panel) হওয়ার পরও স্কুল শিক্ষক পদে মেলেনি চাকরি, হয়নি নিয়োগ। শনিবার ধরনামঞ্চে মাথা নেড়া করে তিনি অভিনব প্রতিবাদে শামিল হয়ে রাতারাতি উঠে এলেন খবরের শিরোনামে। তাঁর এই কাণ্ড দেখে সেখানে ছুটে যান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। চাকরি না পাওয়ার যন্ত্রণা যে কত বড়, তা আবারও বুঝিয়ে দিলেন রাসমনি। তিনি বলছেন, “যন্ত্রণার হাজার দিনে আর কোনও পথ খুঁজে না পেয়ে মাথা নেড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাইনি। সংসার ছেড়ে ধরনামঞ্চে বসে আছি। পাচ্ছি না কিছুই।” অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (CM Mamata Banerjee) ধরনামঞ্চে আসার দাবিও জানান SLST আন্দোলনকারীরা।
[আরও পড়ুন: শৌচালয়ের বাইরে শৌচকর্মের ‘অপরাধ’, ২৫ পড়ুয়ার হাতে গরম তেল ঢেলে শাস্তি ছত্তিশগড়ে!]
মেয়ের মস্তক মুণ্ডনের দৃশ্য টিভিতে দেখেছেন মা, বাবা, স্বামী সকলেই। রাসমনির স্বামী তমলুক আদালতের আইনজীবী। তাঁর প্রতিক্রিয়া, স্ত্রীকে নিয়ে মিডিয়ায় প্রচারে কোনও লাভ নেই। চাকরিটা হোক, সেটাই আসল সমাধান। রাসমনির মা জয়ন্তী পাত্র, বাবা পরিমল পাত্রদের আক্ষেপ, ”এত কিছুর পরও হতাশা ছাড়া তো কিছুই নেই। আমাদের মতো পরিবারের মেয়েরা এভাবে দিনের পর দিন রাস্তায় পড়ে আছে! আমরা ওদের পাশে আছি। সরকারকে বলব, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে একটু মানবিকভাবে বিষয়টি দেখুক, তাহলেই সমাধান হবে।”
[আরও পড়ুন: কুণালের এক ফোনেই কাজ! SLST চাকরিপ্রার্থীদের আলোচনায় ডাকলেন ব্রাত্য]
৬ বছরের এক ছেলে রয়েছে রাসমনির। তাকে ছেড়েই রোজ ভোগপুর থেকে ধর্মতলার এই প্রতিবাদ মঞ্চে ছুটে আসেন। একদিনও এর অন্যথা হয় না। এভাবেই রোজ নিজের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করে চলেছেন। সেই ত্যাগের তালিকায় আজ যুক্ত হল নিজের দীর্ঘ কেশরাশি।