সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘ ছ'মাসের লড়াই। অবশেষে শাপমুক্তি! শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ থেকে দেশে ফিরলেন বীরভূমের সোনালি বিবি ও তাঁর নাবালক সন্তান। এদিন মালদহের মহদীপুর সীমান্ত দিয়ে সোনালিকে ফিরিয়ে আনা হল। বাংলাদেশে সোনালি-সহ ছ'জন বন্দি ছিলেন। সকলকেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত পেরিয়ে কেবল সোনালি ও তাঁর ছেলে দেশে ফিরেছেন। বাকি চারজনকে কেন একসঙ্গে দেশে পাঠানো হল না? কখন তাঁদের ছাড়া হবে? সেই প্রশ্ন উঠেছে।
জুলাই মাসে দিল্লি থেকে 'বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী' হিসেবে সোনালি বিবি-সহ ছ'জনকে পাকড়াও করেছিল পুলিশ। এদেশের নাগরিকত্বের বৈধ সব কাগজপত্র সঙ্গে থাকলেও তাঁদের 'বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী' বলে দাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সোনালির নাবালক ছেলে-সহ মোট ছ'জনকে বাংলাদেশে 'পুশব্যাক' করা হয়েছিল! তাঁদের বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তারপর থেকে সেই দেশের জেলেই বন্দি ছিলেন তাঁরা। সোনালি বিবি অন্তঃস্বত্ত্বা থাকলেও জামিন মিলছিল না। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তাঁর মুক্তির দাবি জানানো হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের মুক্তির জন্য কোনও পদক্ষেপই করছিল না বলে অভিযোগ। এদিকে সুপ্রিম কোর্ট, রাজ্যের হাই কোর্ট সোনালিকে দ্রুত ফেরাতে নির্দেশ দেয়। এরপরও কেন্দ্রের তরফে সোনালিদের ফেরাতে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
দেশে ফিরলেন সোনালি। নিজস্ব চিত্র
দিন কয়েক আগে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের তরফে সোনালিদের ফেরানোর আশ্বাস দেওয়া হয়। এদিকে বাংলাদেশ আদালতও সোনালিদের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। দীর্ঘ ৬ মাস বন্দিদশা কাটানোর জন্য অবশেষে শাপমুক্তি হল সোনালি বিবিদের। ন'মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা সোনালি কবে দেশে ফিরবেন? সেই প্রশ্ন উঠেছিল। এদিন সকাল থেকেই শোনা যাচ্ছিল সোনালি বিবিরা মালদহ সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরবেন। অবশেষে সন্ধে সাতটা নাগাদ মহদীপুর সীমান্ত দিয়ে সোনালি তাঁর ছেলের হাত ধরে দেশে ফিরলেন। সোনালিদের সঙ্গে আরও চারজনেরও দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তাঁদের দেখা যায়নি। তাহলে ওই চারজনকে কেন ছাড়া হল না? কখন তাঁদের দেশে ফেরানো হবে? সেই প্রশ্ন ওঠে।
সোনালিকে মালদহে আনার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন মালদহের জেলা পরিষদের সভাধিপতি ঋতিকা মণ্ডল ঘোষ। তিনি বলেন, "আমাদের দুই নাগরিককে ছাড়া হয়েছে। ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনারকে জিজ্ঞাসা করলাম, আর চারজন কই? তিনি জবাব না দিয়েই পালিয়ে গেলেন।" ওই তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, "আমরা চাই দ্রুত তাঁদের ছাড়া হোক। এই মানুষগুলির সঙ্গে বেইমানি করেছে কেন্দ্র। একই পরিবারের দুজন যখন প্রমাণিত হলেন তাঁরা ভারতীয়, তাহলে পরিবারের আর চারজনকে কেন ছাড়া হল না?" কেন্দ্রের প্রতি এই বিষয়ে ক্ষোভ দেখিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। মেয়ে দেশে ফিরেছেন, সেই খবর পৌঁছে গিয়েছে বীরভূমের সোনালির বাবা-মায়ের কাছে। আনন্দে কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধ দম্পতি। মেয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসুক, সেই কথাই বলছেন বাবা বদু শেখ।
