দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: চুঁচুড়ার বহু মানুষের অভিযোগ ভাল মানুষের মুখোশের আড়ালে ফাঁদে ফেলে অনেককেই সর্বস্বান্ত করেছেন অয়ন। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ অয়নের বিরুদ্ধে জোর করে ফ্ল্যাট দখল করার অভিযোগ তুলেছেন। আর এইরকমই একটি ফ্ল্যাট জোর করে জবরদখল করে তার বান্ধবী শ্বেতা চক্রবর্তীকে উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল অয়ন। তবে শেষ পর্যন্ত সেই ফ্ল্যাটটি দখল করতে সক্ষম হয়নি অয়ন। কিন্তু তার ফলস্বরূপ প্রতারণার শিকার হয়েছেন চুঁচুড়া আখন বাজারের রাধিকারঞ্জন দত্ত।
রাধিকাবাবুর অভিযোগ, বছর দশেক আগে আখনবাজারে চারতলা আবাসনের দোতলায় তার টু বি এইচ কে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন অয়ন। ওই আবাসনের দু’টি তলের তখনও নির্মাণ কার্য সম্পন্ন হয়নি। সেই ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার পর অয়ন সুকৌশলে রাধিকাবাবুকে ওই ফ্ল্যাট বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। রাধিকাবাবু তাতে আপত্তি করলে অশান্তি চরমে পৌঁছয়। এরপর কিছুদিন থাকার পর অয়ন ওই ফ্ল্যাটে তালা বন্ধ করে দিয়ে চলে যান। তারপর থেকে রাধিকাবাবুর নিজের ফ্ল্যাট তালা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। নিজের ফ্ল্যাটের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাধিকাবাবু। সূত্রের খবর, ফ্ল্যাট উপহার দিতে না পেরে তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্য বান্ধবীর অ্যাকাউন্টে বিশাল অঙ্কের টাকা ভরে দিয়েছিলেন অয়ন।
[আরও পড়ুন: অয়নের সঙ্গে কবে আলাপ? কেমন ছিল সম্পর্ক? মুখ খুললেন বান্ধবী শ্বেতা]
নিয়োগ দুর্নীতির বাইরেও সাহায্য করার নাম করে সাধারণ মানুষকে কথার জালে ফাঁসিয়ে সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে অয়নের বিরুদ্ধে। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত অয়নের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছিলেন চুঁচুড়ার পেট্রল পাম্পমালিক গৌতম নন্দী। অয়নের কথার জালে ফেঁসে গিয়ে একসময় পেট্রল পাম্পের মালিকানা খোয়াতে বসেছিলেন গৌতম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। গৌতমবাবুর চুঁচুড়া বড়বাজার সংলগ্ন এলাকায় একটি পেট্রল পাম্প রয়েছে।
এক সময় বছর দশেক আগে ব্যবসায় মন্দা দেখা দিলে চরম আর্থিক অনটনের সম্মুখীন হন তিনি। বাজারে প্রচুর দেনা হয়ে যায়। পাম্প বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দেয়। সেই সময় গৌতমবাবুর পরিচিত রাধিকারঞ্জন দত্তের ফ্ল্যাটে অয়ন থাকত। রাধিকারঞ্জনের মাধ্যমেই অয়নের সঙ্গে গৌতমের পরিচয় হয়। গৌতমকে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়ে অয়ন তাঁর প্রভাব খাটিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা থেকে ১১ লক্ষ টাকা তেলের ব্যবস্থা করে দেয়। তার ফলে নতুন করে ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন গৌতম।
কিন্তু একবারও কল্পনা করেননি এটা একটা ফাঁদ। তেল নিয়ে যখন নতুন করে ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তখন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা তাকে অবিলম্বে ওই তেলের দাম বাবদ ১১ লক্ষ টাকা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য বলে। বিপাকে পড়েন গৌতম। তখন তিনি ফের অয়নের দ্বারস্থ হন। পাম্প বিক্রি করে দিলে ১১ লক্ষ টাকাও মিটিয়ে দেবেন বলে প্রস্তাব দেন অয়ন। গৌতম বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাঁর পাম্পের মালিকানা চলে যেতে বসেছে। অগত্যা নিরুপায় হয়ে বাজার থেকে ১১ লক্ষ টাকা ধার করে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ঋণ মেটান। কোনক্রমে পেট্রল পাম্পটি বেঁচে যায়। চুঁচুড়ার মানুষের বক্তব্য, এরকম বহু মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তাঁদের সম্পত্তির দখল নিয়েছেন অয়ন।