স্টাফ রিপোর্টার: সুপ্রিম কোর্টের 'বাতিল' নির্দেশের পরও 'চাকরিহারা' শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের স্কুলে যাওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হলেও সেটা কীভাবে কার্যকরী করা যাবে, কার্যত সমস্যা সেটা নিয়েই। কারণ, এসব ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকদের কাছে সরকারি স্তরে নির্দিষ্ট অর্ডার আসতে হয়। আর সেটা না পেলে কার্যকর করা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। একইভাবে বিড়ম্বনায় বিদ্যালয়গুলির পরিচালন সমিতির সভাপতিরা। স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা জানাচ্ছেন, "শিক্ষকদের চাকরি থেকে বিতাড়িত করার নির্দেশ সরকারি কোনও স্তর থেকে পায়নি।" পাশাপাশি এত সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী স্কুল থেকে বেরিয়ে গেলে পঠনপাঠনে বিপর্যয় ঘটবে, পরীক্ষা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হবে, সর্বোপরি ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। যার রেশ রাজ্যের বেশ কয়েকটি স্কুলে ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে।
রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন স্কুলে হাহাকার ও সমস্যার ছবিটা মোটামুটি একই। দেখা যাচ্ছে, বাতিল হওয়া এই শিক্ষক-শিক্ষিকারা বহুক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অথচ দুষ্কর বিষয় পড়াতেন। অনেকে আবার স্কুলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন, সেটা পড়ানোর কুশলতায় হোক বা আচার-ব্যবহারে। তেমনই কলকাতার অন্যতম নামী স্কুল যাদবপুর বিদ্যাপীঠের চাকরি হারানো এক শিক্ষক কম্পিউটারে এআই পড়াতেন। এটি ইদানীং সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় বিষয়, বহু ছাত্রের পছন্দেরও। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের একজন শিক্ষক ও একজন শিক্ষাকর্মীর চাকরি গেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য জানাচ্ছেন, "এই বিষয়ের বিকল্প শিক্ষক আমি কোথায় পাব! অথচ এআইতে আগ্রহী বহু পড়ুয়া। আমরা যে হেতু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও নির্দেশ পাইনি তাই তাঁকে আমরা ক্লাস নিতে বারণও করিনি। তা ছাড়াও স্কুলে সামোটিভ পরীক্ষা চলছে, তাই গার্ডও দিয়েছেন তাঁরা।"
দমদমের শ্রীঅরবিন্দ বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক অসীমকুমার নন্দ জানিয়েছেন, মোট তিনজনের চাকরি বাতিল হয়েছে যাঁরা রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং বাণিজ্য বিভাগের বিষয়গুলি পড়াতেন। নারায়ণদাস বাঙুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, "বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকই যদি না থাকে, একাদশে সেই বিষয়টি নিয়ে পড়ুয়াদের ভর্তি নেব কীভাবে!" বেলেঘাটা এলাকার গুঁড়াকন্যা স্কুলের দু'জন শিক্ষক ও একজন শিক্ষাকর্মীর চাকরি গেছে। যে দু'জন শিক্ষকের চাকরি গেছে তাঁরা বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে পড়াতেন। অথই জলে পড়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। যোধপুর পার্ক বয়েজ স্কুলে আবার যে অশিক্ষক কর্মী চাকরি হারিয়েছেন, তিনিই তিনটি ল্যাবের দায়িত্বে ছিলেন, দেখতেন মিড-ডে মিলের বিষয়ও। ফলে সমস্যায় সেই স্কুল। এদিন বেশ কয়েকজন শিক্ষক স্কুলে এসেছিলেন, আবার কেউ আসেননি।