সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: ছাব্বিশের নির্বাচনকে পাখির চোখ করে রাজ্যজুড়ে 'পরিবর্তন সংকল্প সভা'র আয়োজন করেছে বিজেপি। রবিবার ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইল ব্লকের বাকড়ায় সভা করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখান থেকেই শাসকদলকে কটাক্ষ করেন একাধিক ইস্যুতে। ছাব্বিশে জিতলে ৩ লক্ষ টাকার বাড়ি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। যা নিয়েই রীতিমতো বিদ্রুপ করেছে তৃণমূল। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের খোঁচা, "পরিযায়ী পাখি, মিথ্যে বলাই ওনার কাজ।"
রবিবার বিজেপির ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলার উদ্যোগে ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের বাকড়া এলাকায় পরিবর্তন সংকল্প সভার আয়োজন করা হয়। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এছাড়াও ছিলেন বিজেপির ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তুফান মাহাতো, বিজেপি নেতা তুষার মুখোপাধ্যায়, ডাক্তার প্রণত টুডু-সহ অনেকে। সেখান থেকেই এদিন শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে সাঁকরাইল এলাকায় জন সাধারনের কমিটি গঠন করেছিলেন। সেই সময় কী কী ঘটেছে...। সেই ছত্রধর মাহাতো এখন নয়নের মণি। মানিকপাড়ায় জ্ঞানেশ্বরী হত্যাকাণ্ডে একশোর বেশি যাত্রী খুন হয়েছিল। জড়িতরা আজকে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। এক সময় আদিবাসী, কুড়মি জেএসপি নেতাদের মাওবাদী তকমা লাগিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হত। জঙ্গলমহলের সেই অত্যাচারী পুলিশ সুপারকে কলকাতার নগরপাল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা চেয়েছিলাম আসল পরিবর্তন আনতে হবে। সেখানে কিছুই পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তন বলতে কিছু মানুষ পাঁচশো, সাতশো টাকা ভাতা পাচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন গ্রামের ছেলেরা কাজ না পেয়ে ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে গিয়েছেন। জঙ্গলমহলের গাছ কেটে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। জঙ্গল কেটে ফাঁকা করে দিচ্ছে। সুবর্ণরেখা-সহ বিভিন্ন নদীর বালি লুঠ করছে। প্রকৃতি মায়ের উপর অত্যাচার করছে। কিছুদিন আগে এখানে ইডি এসেছিল। আর গোপীবল্লভপুরের এক বালিখাদানের ম্যানেজারের বাড়ি থেকে ৬৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছেন। প্রায় ১০০ ভরির কাছাকাছি স্বর্ণ পাওয়া গিয়েছে। আর আপনারা গরীব থেকে আরও গরীব হয়েছেন, বেকার যুবক যুবতীরা শেষ হয়ে গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বিভাজনের রাজনীতিতে করে কুড়মিদের সঙ্গে আদিবাসীদের লড়াই বাধিয়েছে। এক সময় জঙ্গলমহলের মানুষ অনেক আশা নিয়ে চুড়ামণি মুর্মু, সুকুমার হাঁসদাদেরকে নির্বাচিত করেছিল। কিন্তু কী হল! আজকে বাংলার পুলিশের দ্বারা সব দেব-দেবীরাও আক্রান্ত।"
এদিনের সভা থেকে হিন্দুদের একত্রিত হওয়ার ডাক দেন শুভেন্দু। বলেন, "যারা হাতের কাজ জানেন তাদের জন্য মোদিজি বিশ্বকর্মা যোজনা এনেছিলেন। সব রাজ্যে চলছে। এখানে বন্ধ করে দিয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত চালু করার জন্য পরিবর্তন দরকার। এই ভুয়ো স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে কেউ চিকিৎসা পায় না। আর লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য আপনাদেরকে ভয় দেখায়। এই কর্মসুচি বিজেপি থেকে চুরি করা। বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলিতে ২ হাজার, আড়াই হাজার টাকা দেওয়া হয় মহিলাদের। ওখানে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকায় বাড়ি তৈরি হয় না। তাই বিজেপিকে আনুন তিন লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। প্রত্যেক বাড়িতে সৌরশক্তি পাবেন। এটা বিজেপি দেবে। গ্রীষ্মকালে জঙ্গলমহলে এখনও জলের জন্য লড়াই করতে হয়।" সাঁকরাইলের জমিবিক্রি প্রসঙ্গেও এদিন সরব হন শুভেন্দু। বলেন, "সাঁকরাইলের বাকড়ায় জীবিত মানুষকে মৃত করে জমি বিক্রি করে দিয়েছে তৃণমূল। এখানকার প্রধান লিখে দিয়েছেন। এরকম ১০৫ জনের জমি বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছে এই তৃণমূল। এ রাজ্যে নারীদের কোনও সুরক্ষা নেই। তাই নিজেদের সুরক্ষার জন্য বিজেপি আনুন।" এপ্রসঙ্গে ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের-সহ সভাপতি প্রসুন ষড়ঙ্গী বলেন, "ওদের পাশে মানুষ নেই। ওদের একটাই কাজ মানুষকে বিভ্রান্ত করা, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া। নির্বাচন এলেই মিথ্যা প্রতিশ্রুতির বন্যা। সারা বছর দেখা নেই। এরা পরিযায়ী পাখি ছাড়া আর কিছু নয়। মানুষ সব বোঝে।"
উল্লেখ্য ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের বাকড়া এলাকায় ১২৫টি পরিবারের প্রায় ৪০০ একর জমির দলিল অন্যের নামে করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। জীবিতকে মৃত দেখিয়ে ভুয়ো উত্তরাধিকার শংসাপত্র জমা দিয়ে দলিল করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে এপর্যন্ত মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
