অর্ণব দাস, বারাসত: সুদের ফাঁদে পড়ে এক-দু'জন নয়, অশোকনগর থানা এলাকার কমকরে দশজনকে দিতে হয়েছিল কিডনি! প্রাথমিক তদন্তে এমনটা উঠে এলেও সংখ্যাটা এর কয়েকগুণ বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। কিডনি বিক্রির জন্য দাতাদের পাঁচ-সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকার কথা জানানো হলেও আদতে নেওয়া হত ন্যূনতম ২৫লক্ষ টাকা। এর থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন পেত ধৃত 'সুদখোর' বিকাশ ঘোষ ওরফে শীতল। সে ছিল শুধুমাত্র একজন এজেন্ট। তাঁর কাজ ছিল, এক লক্ষের কম টাকা ৩৬০ শতাংশ সুদে ধার দিয়ে হতদরিদ্রদের ফাঁদে ফেলা। এত পরিমাণ সুদ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দিতে বিফল হয়ে ঋণ গ্রহণকারীরা আত্মসমর্পণ করলেই শুরু হয়ে যেত সুদখোর এজেন্টের খেলা। তারপরই সে চাপ দিয়ে কিডনি বিক্রির করতে রাজি করাতো।

সম্প্রতি এক যুবকের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকাশ্যে আসে 'সুদখোর' বিকাশ ঘোষ ওরফে শীতলের নাম। জানা যায়, শীতলের সঙ্গে যোগ ছিল উত্তরপ্রদেশের এক দালালের। ওই দালালের অধীনে শুধুমাত্র অশোকনগরের শীতল নয়, সংলগ্ন একাধিক এলাকার 'সুদখোর' কাজ করত বলেই মনে করছে পুলিশ। তাঁদেরও কাজ ছিল একই, সুদের ফাঁদে ফেলে কিডনি বিক্রি করানো। কিন্তু কিডনি দান করতে চাই বললেই তো হবে না, এরজন্য প্রয়োজনীয় আইনি অনুমতি। তারপর মহকুমা স্তরে ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন করেন স্বাস্থ্য ও প্রশাসনের আধিকারিকেরা। তারপরই মেলে সর্বোচ্চ স্তর থেকে ছাড়পত্র। এর মূল শর্তই হল কোনওভাবেই আর্থিক লেনদেন করা যাবে না। সরকারি এত নিয়মাবলী, আনুষ্ঠানিকতা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে কিডনি পাচার চক্র সক্রিয়? এই প্রশ্নই এখন উঠতে শুরু করেছে। তাই শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশের দালাল এবং এলাকার সুদখোরেরাই নয়, মাঝেও একটি টিম রয়েছে বলেই মনে করছে পুলিশ।
উত্তর ২৪ পরগনার স্বাস্থ্য জেলার অন্তর্গত কতজন কিডনি দান করেছে তার রিপোর্টও ইতিমধ্যেই পুলিশ চেয়েছে। দু'বছরের রিপোর্ট চাইলেও করোনার পরবর্তী সময় থেকেই এই কিডনি পাচারের চক্র জেলায় সক্রিয় বলেই অনুমান করছেন তদন্তকারীরা। বারাসত জেলা পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খারিয়া জানিয়েছেন, "মূল দালাল-সহ যারা সরকারি অনুমতি জোগাড় করত তাদের খোঁজ চলছে। তারপরই কীভাবে এই চক্র কিভাবে কাজ করত বোঝা যাবে। আবেদন করব যাদের সঙ্গে এমন হয়েছে, তাঁরা পুলিশকে জানাক।"