সুমন করাতি, হুগলি: 'অকাল' বিশ্বকর্মা পুজো হুগলিতে। উৎসবে মেতে উঠেছেন জেলার বেগমপুর, ছোটতাজপুর, দক্ষিণ খরসরাই ও মনিরামপুর গ্রামের বাসিন্দারা। আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু পুজো। আগামী চারদিন চলবে এই পুজো। এই বছর ক্লাব ও বারোয়ারি কমিটি মিলেয়ে মোট ২৯টি পুজো হচ্ছে এলাকায়। সকাল থেকে প্রতিটি তাঁতঘরে চলছে পুজো।
তবে এই সময়ে বিশ্বকর্মা পুজো কেন? গ্রামের বৃদ্ধরা জানাচ্ছেন, ভাদ্র মাসের পুজোর সময় গ্রামের তাঁতঘরগুলোয় প্রত্যেকেই দুর্গাপুজোর জন্য শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত থাকতেন। করা হত না পুজো। একটা আক্ষেপ থাকতই। তার পরিবর্তে পৌষ মাসের শুক্লাপক্ষের নবমী তিথিতে পুজো শুরু হয় গ্রামগুলোতে। এই রীতি চলে আসছে বছরের পর বছর। এখন তাঁত শিল্পের অবস্থা আগের থেকে অনেক খারাপ হলেও পুজোয় ভাঁটা পড়েনি। সংখ্যায় কমলেও যতটা সম্ভব জাঁকজকম করে পুজো হচ্ছে। 'অকাল' বিশ্বকর্মা পুজোতে মেতে ওঠে এলাকার আট থেকে আশি সকলেই।
শুধু ভাদ্র মাসের বদলে পৌষ মাসে পুজোই নয়। বিশ্বকর্মার রুপেও বদল রয়েছে। হাতির বদলে বাহন হিসেবে থাকে ঘোড়া। ঘোড়ার খুঁড়ের খটখট শব্দের সঙ্গে তাঁতের মাকুর শব্দের সঙ্গে মিল থাকার কারণে হাতির বদলে বিশ্বকর্মার বাহন ঘোড়া করা হয়। পূজারী তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, "পৌষ মাসের শুল্কপক্ষ তিথিতে এখানে পুজো হয়। এখানে বিশ্বকর্মার বাহন ঘোড়া। এই পুজোর জন্য আমরা বছরভর অপেক্ষা করে থাকি।" এই পুজোর পর থেকেই আগামী বছরের দুর্গোপুজোর জন্য শাড়ি বুননের কাজ শুরু হবে।
প্রতিমা, মণ্ডপসজ্জা, আলোর রোশনাই একে অপরকে টেক্কা দিলেও প্রদীপের নিচের অন্ধকার গ্রাস করেছে তাঁতশিল্পীদের। আগে বেগমপুর এলাকায় ৫ হাজার শিল্পী এই পেশায় যুক্ত ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে রোজগার কমে যাওয়ায় নতুন প্রজন্ম এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। তাঁতশিল্পী নবকুমার শীলের কথায়, "জাঁকজমক করেই পুজো হচ্ছে। চারদিন ধরে পুজো হবে। তবে মনে আনন্দ নেই। হস্তচালিত তাঁতের অবস্থা খারাপ। পুজো হয়ে গেলেই মনে চিন্তা ঘুরবে। রোজগার না হওয়ায় নতুন প্রজন্ম এই কাজে আসছে না।" পুজোয় মেতে ঠাকুরের কাছে প্রত্যেকের প্রার্থনা ফের তাঁতের শিল্পের অবস্থা ফিরুক।