সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: ছাত্রী সংখ্যা ১২০০। এই স্কুলে চাকরি হারিয়েছেন আট জন শিক্ষক। ছিলেন একমাত্র করণিক। তাঁরও চাকরি গিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ঝাড়গ্রাম জেলার মধ্যে এই স্কুলটিই একমাত্র যেখানে একসঙ্গে এত শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। এই অবস্থায় উচ্চমাধ্যমিক বিভাগ চালাতে হিমশিম অবস্থা বিদ্যালয়ের। তার মধ্যেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা-সহ বাকি শিক্ষিকারা নিজের চেষ্টায় ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন। উচ্চমাধ্যমিক বিভাগে ভৌত বিজ্ঞানের বিষয়গুলি শিক্ষকহীন। শিক্ষক নেই ইতিহাস, বাংলা, ইংরেজি বিষয়েরও। এই অবস্থায় উচ্চমাধ্যমিক বিভাগের পড়াশোনা কীভাবে চলবে, তা নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। লাটে উঠেছে অফিশিয়াল কাজকর্মও।

ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের কুলটিকরী বালিকা বিদ্যালয় (উচ্চমাধ্যমিক)। এই বালিকা বিদ্যালয়টিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জেলার মধ্যে একসঙ্গে চাকরি গিয়েছে সাত শিক্ষক-সহ আট জনের। এর মধ্যে রয়েছেন সাতজন শিক্ষিকা এবং স্কুলের একমাত্র করণিক। এই বিদ্যালয়ে ছিলেন ২৩ জন শিক্ষিকা ছিলেন। বর্তমানে সাত শিক্ষিকার চাকরি বাতিল হওয়ায় ১৬ জন শিক্ষিকা নিয়ে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চালাতে রীতিমতো কালঘাম ছুটছে শিক্ষিকাদের। এ বিষয়ে ঝাড়গ্রাম জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শক্তিভূষণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "আমরা প্রথমে যে তালিকা পেয়েছিলাম, তাতে ওই স্কুলের নাম ছিল না। চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতে সময় কুলটিকরী বালিকা বিদ্যালয়ের (উচ্চমাধ্যমিক) নাম তোলা হয়েছে সবথেকে বেশি এফেক্টেড স্কুল হিসেবে।"
কুলটিকরী বালিকা বিদ্যালয়ের ১২০০ ছাত্রীকে পড়াচ্ছেন মাত্র ১৬ শিক্ষিকা। ছবি: প্রতীম মৈত্র।
এই বিষয়ে কুলটিকরী বালিকা বিদ্যালয়ের ( উচ্চমাধ্যমিক) প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বলা মাইতি বলেন, "আমরা জানতে পেরেছি, আমাদের স্কুলেই জেলার মধ্যে সবথেকে বেশি চাকরি হারিয়েছেন। একমাত্র করণিকের চাকরি গিয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক বিভাগে ইতিহাস, বাংলা,ইংরেজি, ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক রয়েছেন এই তালিকায়। এছাড়া একজন অঙ্ক শিক্ষকেরও চাকরি বাতিল হয়েছে। সবমিলিয়ে সাতজন শিক্ষিক সহ আটজন রয়েছেন চাকরিহারার তালিকায়। এই অবস্থায় কীভাবে উচ্চমাধ্যমিক বিভাগ চলবে, বুঝতে পারছি না। একমাত্র ক্লার্ক চলে যাওয়ায় অফিসের কাজকর্ম প্রায় বন্ধ। বেতন কীভাবে হবে, তাও বোঝা যাচ্ছে না। আমরা যে কজন আছি, চেষ্টা করে চলেছি ক্লাস চালিয়ে যেতে। ১২০০ পড়ুয়া আমাদের। খুবই সমস্যার মধ্যে পড়েছি।"
ঝাড়গ্রামের কুলটিকরী বালিকা বিদ্যালয়ে জেলার মধ্যে সবচেয়ে 'এফেক্টেড স্কুল' বলে জেলা শিক্ষা দপ্তরের দাবি। ছবি: প্রতীম মৈত্র।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাতজন শিক্ষকের মধ্যে রয়েছেন দু'জন বাংলা, দু'জন ইংরেজি, একজন অঙ্ক, একজন ভৌত বিজ্ঞান, একজন ইতিহাসের। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সংখ্যা ১৬৪ জন। জেলা বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলায় সবথেকে বেশি চাকরিহারা শিক্ষক রয়েছেন (এফেক্টড স্কুল)এমন ২০টি স্কুলের নাম রাজ্যের শিক্ষাদপ্তরে পাঠানো হয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলা শিক্ষা দপ্তর থেকে। এছাড়াও ৬ টি এমন স্কুলের তালিকা পাঠানো হয়েছে, যেখানে সব থেকে বেশি অশিক্ষক কর্মীর (গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি)চাকরি গিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিনপুর ১ ব্লকের বৈতা শ্রী গোপাল হাই স্কুল (উচ্চপ্রাথমিক) যেখানে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তিন শিক্ষাকর্মীর একসঙ্গে চাকরি গিয়েছে। উল্লেখ্য, 'সুপ্রিম' রায়ে ঝাড়গ্রাম জেলায় চাকরি হারিয়েছেন মোট শিক্ষক ৩৫১। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী ১২৩ জন এবং ৫৩ জন করণিক কর্মহীন।