স্টাফ রিপোর্টার: আর জি কর কাণ্ডকে সামনে রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলকে পরিকল্পিতভাবে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করা শিল্পী তথা অভিনেত্রীদের বয়কট শুরু হয়ে গেল রাজ্যজুড়ে। মঙ্গলবারই 'চটিচাটা' বলে শাসকদলকে আক্রমণ করা বেশ কয়েকজন শিল্পীর বুকিং তৃণমূলের আয়োজকরা বাতিল করে দিয়েছেন। বয়কট শুরু হয়ে গিয়েছে বহু অরাজনৈতিক ক্লাব এবং সংগঠনের তরফে আয়োজিত 'উইন্টার কার্নিভাল' থেকেও।
শুধু তাই নয়, সোশাল মিডিয়ায় তৃণমূলের অন্দরে ওই সমস্ত অভিনেতা- অভিনেত্রী এবং শিল্পীদের তালিকা ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও এদিন কুৎসাকারী শিল্পীদের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষের বয়কট করার দাবিকে প্রকাশ্যেই সমর্থন করেছেন। বাঁকুড়া- পুরুলিয়া থেকে শুরু করে সুদূর উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও মালদহ এবং দক্ষিণবঙ্গের নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং দুই মেদিনীপুর থেকে সারাদিনই শিল্পীদের ওই তালিকা তৃণমূলের ছাত্র-যুবরা সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে। এদিন বাঁকুড়ার এক জেলা পরিষদ সদস্য বলেছেন, "উৎসব বয়কটের ডাক দেওয়া ওই শিল্পীদের যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার। তেমনই আমরা তাঁদের কোনও অনুষ্ঠান থেকে বাদ দেব বা বয়কট করব, সেটা আমাদেরও গণতান্ত্রিক অধিকার।" বিরোধীরা অবশ্য শিল্পীদের এই বয়কট নিয়ে শাসক দলকে কটাক্ষ করেছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, "শিল্পীরা প্রতিবাদী মিছিলে হাঁটতেই পারেন। আমাদের আপত্তি সব শিল্পীদের নিয়ে নয়। যে কয়েকজন শিল্পী পরিকল্পিত কুৎসা করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্য সরকার ও দলকে জঘন্য ভাষায় আক্রমণ করেছেন, সরকার ফেলে দেওয়ার কথা বলেছেন, তৃণমূল সমর্থকদের কুৎসিত ভাষায় অপমান করেছেন, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে প্ররোচনা দিয়েছেন, তাঁদেরই তৃণমূলের মঞ্চে বয়কট করতে বলছি।"
সোশাল মিডিয়ায় বয়কটের ডাক দেওয়া ওই শিল্পীদের যে তালিকা ভাইরাল হয়েছে, তাতে অভিনেত্রী সোহিনী সরকার, সুদীপ্তা-বিদীপ্তা চক্রবর্তী, অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী, সাহেব চট্টোপাধ্যায়, অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র, উষসী চক্রবর্তী, দেবলীনা দত্ত, চৈতি ঘোষাল, পায়েল মজুমদার, চিত্রশিল্পী সনাতন দিন্দা, সংগীতশিল্পী লগ্নজিতা চক্রবর্তী, শোভন গঙ্গোপাধ্যায়, আর জে অগ্নি, মীর, অমৃতা দত্ত, উষসী রায়, পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত প্রমুখ। এছাড়াও বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী থেকে শুরু করে ডাক্তার কুণাল সরকারের নামও রয়েছে বয়কটের জন্য ডাক দেওয়া ভাইরাল হওয়া ওই তালিকায়। অবশ্য, তৃণমূলের অন্দরেই অভিনেতা সাংসদ দেব ও পরিচালক-বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীও বিজেপি নেতা- অভিনেতাদের নিয়ে সিনেমা করার পাশাপাশি সুবিধাবাদী অবস্থান নেওয়ায় প্রবল সমালোচিত হচ্ছেন। এর মধ্যে সোহিনী, শোভন, সাহেব, দেবলীনা, ঋত্বিক, চৈতি ঘোষালরা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে গালাগালি দিয়ে পদত্যাগ করার দাবি করেছিলেন। লগ্নজিতা দফায় দফায় মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কুৎসা করেছেন। সাহেব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মুখ্যমন্ত্রীকে গালাগালি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। সুদীপ্তা-বিদীপ্তা দুই বোন মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন। সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থনে যে সমস্ত তৃণমূল নেতা বা কাউন্সিলররা সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেন, তাঁদের চটিচাটা বলে প্রকাশ্যেই আক্রমণ করতেন এই শিল্পীরা।
দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল কাউন্সিলর মৌসুমী দাস ফেসবুকে লিখেছেন, "চটিতে যাঁর ঘেন্না/ সেই শিল্পী চাই না। আমরা চটির ভক্ত/ চটি হল আরও শক্ত।" ফেসবুকের সঙ্গে ইনস্টাগ্রাম, এক্স হ্যান্ডল, এমন একাধিক আক্রমণাত্মক পোস্টে সোশাল মিডিয়ার তালিকায় শিল্পীদের বয়কটের দাবি ভাইরাল হয়। এই বয়কট নিয়ে প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ ফের এদিন বলেছেন, "প্রতিবাদ করার পূর্ণ অধিকার আছে সকলের। যাঁরা বিরোধী দল করেন, তাঁরা তো আন্দোলন করবেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত কুৎসা এবং মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা শিল্পীদের ফের সেই তৃণমূলেরই মঞ্চে অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার বিরুদ্ধে, দলের তরফে বয়কট করার ডাক দেওয়া হয়েছে। কর্মীরা সাড়া দিচ্ছেন।"