সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে 'সেবাশ্রয়' প্রকল্পের স্বাস্থ্য শিবিরগুলিতে ব্যাপক সাড়া মিলল। শুক্রবার ছিল বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের দ্বিতীয় দিন। পরিষেবা নিতে এদিন ডায়মন্ড হারবার বিধানসভার প্রতিটি স্বাস্থ্যশিবিরেই রোগীদের ভিড় ছিল উপচে পড়া।এদিন পুরোদমে চলে মোট ৪১ টি শিবির। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা সকাল নটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত প্রতিটি ক্যাম্পেই রোগীদের উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে সহযোগিতা করেন। শিবিরগুলিতে বিনামূল্যে এমন সু-চিকিৎসার সুযোগ পেয়ে অভিভূত রোগী ও আত্মীয়রা। সাংসদের এহেন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলেই।
বৃহস্পতিবার উদ্বোধনের দিন থেকেই ৪১ টি শিবিরে একটু একটু করে রোগীদের ভিড় জমছিল। প্রথমদিন ডায়মন্ড হারবার বিধানসভার ৪১ টি শিবিরে ৫৬৮৯ জন উপস্থিত হন। ৩৩৪০ জন রোগীর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়। ২৬০০ জনকে দেওয়া হয় বিনামূল্যে ওষুধ। রেফার করা হয়েছিল ১৮১ জনকে। দ্বিতীয় দিনের হিসেবে জানা গিয়েছে, ৪১টি শিবিরে মোট উপস্থিতির সংখ্যা ৬,৯৪৫। তাঁদের মধ্যে ৪,৩১২ জনের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়। ৩,৯৪২ জনকে ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। রেফার করা হয়েছে ২৩৬ জনকে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে 'সেবাশ্রয়' প্রকল্পে স্বাস্থ্যশিবিরে বিনামূল্যে চিকিৎসা। নিজস্ব চিত্র।
নিজের সংসদীয় কেন্দ্রের সাধারণ মানুষের সুস্বাস্থ্যের লক্ষ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছেন ডায়মন্ড হারবারের কামারপোলের একজন উপভোক্তা। 'সেবাশ্রয়' ক্যাম্পে চিকিৎসা গ্রহণের পর তাঁর শারীরিক সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই উপভোক্তা সাকিনা খাতুন। তাঁর ছেলে শিবিরে উন্নত পরিষেবা পেয়ে সাংসদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সাংসদকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, "আমার মা একটি গুরুতর শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সেবাশ্রয়ের প্রথম দিনেই আমরা মাকে একটি শিবিরে নিয়ে আসি। ডাক্তাররা খুব যত্ন সহকারে চিকিৎসা করলেন এবং ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে রেফার করেন। যেখানে তিনি দুটি ব্যয়বহুল মেডিকেশন বিনামূল্যে পেয়েছেন। এখন, তিনি সুস্থ আছেন ও ভালো আছেন।"
দ্বিতীয় দিনে ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের শিবালয়ের স্বাস্থ্যশিবিরে চিকিৎসা করাতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়া বৃদ্ধা আশালতা দেবীকে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করেন ও তৎক্ষণাৎ ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়। এমন পরিষেবায় আপ্লুত ওই বৃদ্ধার পরিবার। এমনই বহু রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা বিভিন্ন শিবিরে উপস্থিত হয়ে উন্নত পরিষেবা পেয়ে দারুণ খুশি।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই ডায়মন্ডহারবার এসডিও গ্রাউন্ডে 'সেবাশ্রয়' প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকল্পের উদ্বোধন করে তিনি আশাপ্রকাশ করেন কোভিডকালে মানুষকে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে 'ডায়মন্ড হারবার মডেল' সারা দেশে যেমন নজির সৃষ্টি করেছিল, এই 'সেবাশ্রয়' প্রকল্পও আরও একবার দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে। কোনও রাজনৈতিক রঙ বিচার না করেই সকল স্তরের মানুষকে এই বিশাল কর্মযজ্ঞে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন সাংসদ। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যপরিষেবা গ্রহণ করতে ক্রমেই ভিড় জমছে একের পর এক শিবিরে।
ডায়মন্ড হারবার বিধানসভা কেন্দ্রে আগামী ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৪১ টি শিবির চলবে। নিজস্ব ছবি।
ডায়মন্ড হারবার বিধানসভা কেন্দ্রে আগামী ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৪১ টি শিবির চলার পর একে একে অন্যান্য ছটি বিধানসভা কেন্দ্র - ফলতা, সাতগাছিয়া, বিষ্ণুপুর, বজবজ, মেটিয়াবুরুজ ও মহেশতলায় গড়ে ৪০-৪৫ টি করে শিবির চলবে। প্রতি বিধানসভা কেন্দ্রে দশ দিন করে শিবির চলবে। সকল বিধানসভায় ৭০ দিন ধরে শিবির চলার পর আগামী ১৬-২০ মার্চ পাঁচ দিন প্রতি শিবিরেই একসঙ্গে চলবে মেগা ক্যাম্প। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, কর্মসূচি উদ্বোধনের মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যেই যেভাবে মানুষ সাংসদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে শিবিরগুলিতে হাজির হতে শুরু করেছেন, তাতে মানুষের চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে একপ্রকার বিপ্লব আনতে চলেছে।