রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: বিজেপির সন্ত্রাস উড়িয়ে কাঁথিতে সমবায় ব্যাঙ্কের ভোটে বিপুল জয় পেল তৃণমূল। প্রাক্তন মন্ত্রীকে মারধর, ভোটারদের ভয় দেখিয়েও লাভ হল না, তৃণমূলের পক্ষেই যে মানুষের সমর্থন অটুট আছে তা দেখাল কঁথির এই ভোট। খাতা খুলতেই পারল না বিরোধী বিজেপি। সেই সঙ্গে ২৩ বছর টানা সভাপতি শুভেন্দু অধিকারীর জমানার অবসান ঘটল বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের।

কাঁথি কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন সমবায় ব্যাঙ্ক অর্থাৎ কার্ড ব্যাঙ্কের ১১টি কেন্দ্রে ভোট হয় শনিবার। ৭৮টি আসনের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই ১৮টি আসনে জয়ী হন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থী। বাকি ৬০ আসনে শনিবার ভোট গ্রহণ হয়। ভোট শুরুর পরেই কাঁথির জাতীয় বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্রের থেকে কিছুটা দূরে তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এদিকে এদিন কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের ভোট ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় রামনগর কলেজ চত্বর। আক্রান্ত হন তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরি। অভিযোগ, সমবায় ব্যাঙ্কের ভোট কেন্দ্রে ব্যাঙ্কের পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও ভোটারদের ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ। তার প্রতিবাদ করতেই আক্রান্ত বলে দাবি অখিলের।
অখিল গিরি বলেন, "পুলিশের লোকটাই আমার গায়ে হাত তুলেছে। জেরক্স কপি নিয়ে এসেছে বলে ভোট দিতে দিচ্ছে না। ভোটারদের বারবার হেনস্তা করা হয়েছে।" যদিও বিজেপির অভিযোগ, তাঁদের ভোট দিতে বাধা দিয়েছে তৃণমূল। কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান তথা কাঁথি সাংগঠনিক জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি পালটা বলেন, "চোরের মায়ের বড় গলা। মানুষ নেই, জনবল নেই, ভোটার নেই। এখন পিঠ বাঁচাতে হবে। তাই শুভেন্দু অধিকারীর চ্যালারা মিথ্যে অভিযোগ করে সকাল থেকে মাঠ গরমের চেষ্টা করেছেন। হাওয়া বেরিয়ে গিয়েছে।” তবে এই বিপুল জয়ের খবরে আবির খেলা শুরু হয়ে যায়। কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি পীযূষকান্তি পন্ডা বলেন, "মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে যে রয়েছে তা এই বিপুল জয় প্রমাণ করে। কাঁথিতে অধিকারী মিথ আগেই ভেঙে চুরমার হয়েছিল। এদিন আবারও কাঁথিতে অধিকারী রাজত্বের যে পতন হয়েছে তা প্রমাণিত হল। এই জয়ে সমবায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্যের নেতা আশিস চক্রবর্তী জানান যে, পূর্ব মেদিনীপুর জুড়ে সমবায়ের ক্ষেত্রে শুভেন্দু অধিকারীর যে মৌরসিপাট্টা চলছিল বর্তমানে সাধারণ মানুষ তা ভেঙে দিয়েছে। তিনটি ব্যাঙ্ক যথাক্রমে তমলুক এআরডিবি, কন্টাই কো অপারেটিভ ব্যাঙ্ক, কন্টাই কার্ড ব্যাঙ্কের যে দীর্ঘদিন ধরে অরাজকতা চলছিল, সুস্থ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ তা শেষ করেছেন।" যদিও কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি সোমনাথ রায় বলেন, "ভোটের নামে দিনভর নাটক আর প্রহসন হয়েছে। তৃণমূল বুথ ভাঙচুর করেছে, ভোটার স্লিপ কেড়ে নিয়েছে। মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে এর উত্তর দেবেন।"