ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ২০২৬ সালের ভোটকে নজরে রেখে ১৫ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার পোশাকি নাম 'উন্নয়নের পাঁচালি'। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া সেই রিপোর্ট কার্ডই এ বার জনতার দুয়ারে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিলেন সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘোষণাও করে দিলেন দলের নতুন কর্মসূচি। নাম 'উন্নয়নের সংলাপ'। এই কর্মসূচিতে মমতার দূত হিসাবেই ঘরে ঘরে যাবেন তৃণমূল নেতারা। তাঁরাই তুলে ধরবেন মমতার জমানায় কাজের খতিয়ান। পয়লা জানুয়ারি থেকেই এই কর্মসূচি শুরু হবে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্লোগান, 'বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই'-এর পালটা দিয়ে এদিন অভিষেকের পালটা, 'বাঁচতে চাই, তাই বিজেপি বাই'।
এদিন ভোটমুখী বাংলায় দলের স্লোগানও বেঁধে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। দলীয় বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, এ বার দলের স্লোগান হবে 'মানবে হার, আবার তৃণমূল সরকার'। ঘটনাচক্রে, দিন কয়েক আগেই নদিয়ার তাহেরপুরে সভায় ফোন-বক্তৃতায় বিজেপির স্লোগান বেঁধে দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তাঁর স্লোগান, 'বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই'। মোদির এই স্লোগান নিয়েও কটাক্ষ করেছেন অভিষেক। বলেছেন, "প্রধানমন্ত্রী আসলে বলতে চেয়েছেন, আত্মসমর্পণ করে বিজেপিতে যোগ দিন। নইলে ছাড়ব না। কিন্তু এ সব করে কিছু হবে না। মা মাটি মানুষেরই সরকার জিতবে। আমরা বলছি, 'বাঁচতে চাই, বিজেপি বাই।"
ছবি: তৃণমূলের ফেসবুক পেজ থেকে।
জানুয়ারি মাসেই অভিষেক নিজে জেলা সফর শুরু করবেন বলে খবর তৃণমূল সূত্রে। তার আগে শুক্রবার সমস্ত বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন সেনাপতি। সেই বৈঠকে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা করে নীল নকশা তৈরি করে দিলেন তিনি। অভিষেক জানিয়ে দিয়েছেন, প্রতিটি বিধানসভায় তিনটি দল কাজ করবে। প্রতিটি দলে ৫-১০ জন করে সদস্য থাকবেন। দলে রাখা হবে বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, পুরপ্রধান-সহ ব্লকের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। অভিষেক জানিয়েছেন, প্রায় ১৮০০ জন 'প্রভাবী' (ইনফ্লুয়েন্সার) চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২০০ জনের কাছে যাবেন মন্ত্রী-সাংসদেরা। বিধায়ক, জেলা সভাপতিরা যাবেন বাকিদের কাছে। এই প্রভাবীদের কাছে কিট পৌঁছে দেওয়া হবে। সেই কিটেই লেখা থাকবে উন্নয়নের পাঁচালি, অর্থাৎ মমতার সরকারের ১৫ বছরের রিপোর্ট কার্ড। থাকবে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতার লেখা চিঠিও।
গত লোকসভা ভোটের সময় থেকেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে উন্নয়নের খতিয়ান প্রকাশের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আসছিলেন অভিষেক। কিন্তু বিজেপি সে রকম কোনও রিপোর্ট কার্ডই তুলে ধরতে পারেনি বলেই অভিযোগ তৃণমূলের। এ নিয়েও শুক্রবারের দলীয় বৈঠকে অভিষেক বলেছেন, "আমরাই ভারতের একমাত্র দল, যারা কাজের খতিয়ান তুলে ধরে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। আমাদের এই সৎ সাহস আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজের রিপোর্ট সকলের বাড়ি যাবে।" সেনাপতির সংযোজন, "আমরা দিল্লির বিজেপি নেতাদের কাছে হিসাব দিতে রাজি নই। আমরা বাংলার ১০ কোটি মানুষের কাছে হিসাব দিতে রাজি। ২০২১ সালে রাজনৈতিক ভাবে কুপোকাত হয়ে যাওয়ার পরে রাস্তা, বাড়ি, ১০০ দিনের কাজের টাকা সব বন্ধ করে দিয়েছে। আদালত বলার পরেও তা দেওয়া হচ্ছে না। এটাই সবাইকে বলতে হবে।"
