নিরুফা খাতুন: সুদূর জার্মানি থেকে দীর্ঘ পথযাত্রা করে পা রেখেছেন বাংলার মাটিতে। গন্তব্য দক্ষিণ ২৪ পরগনার গদখালি। দমদম বিমানবন্দর থেকে অ্যাপ ক্যাব বুক করে সরাসরি সেখানে পৌঁছনোর সহজ পরিকল্পনা করেছিলেন ৩ জার্মান পর্যটক। কিন্তু যতই গুগল ম্যাপ (Google Map) থাকুক, পৃথিবীর সব জায়গা কি এত সহজেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব? মোটেই নয়। তাই তো বকখালির কাছে বারবার ভুলভুলাইয়ার মতো পাক খাচ্ছিলেন তাঁরা। মানচিত্র যা খুঁজে দিতে পারেনি, পর্যটকদের গন্তব্যের সেই জায়গাই খুঁজে দিলেন ডায়মন্ড হারবারের ট্রাফিক (Traffic Police) গার্ডের সার্জেন্ট সাগর সিংহ। তাঁর প্রশংসায় ফেসবুক পোস্ট করলেন জার্মান পর্যটকরা। বিদেশি পর্যটকদের এভাবে সাহায্য করতে পেরে তাঁরা আপ্লুত, পালটা পোস্টে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে কলকাতায় নেমেছেন। গন্তব্য দক্ষিণ ২৪ পরগনার গদখালি। অথচ সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ডায়মন্ড হারবার (Diamond Harbour) রোডের উপর বিবেকানন্দ মিশন স্কুলের কাছে দেখা যায়, রাস্তায় দিশাহীনভাবে ইতিউতি ঘুরছেন জার্মানি (Germany) থেকে আসা তিন পর্যটক – মার্টিন হাসেলবাখ, জুডিথ কান্ডলবিন্ডর এবং ক্রিস্টফ বিশফ। সামনে কর্তব্যরত ডায়মন্ড হারবার ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট সাগর সিংহকে দেখে তাঁর কাছেই সাহায্য চান তাঁরা।
[আরও পড়ুন: জয়েন্ট পাশ না করেও ‘কোটা’য় ডাক্তারি! বাম আমলের তালিকা চাইলেন কুণাল]
ভিনদেশি পর্যটকরা তাঁকে জানান, কলকাতা বিমানবন্দর (Kolkata Airport) থেকেই অ্যাপ ক্যাব ভাড়া করার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। কিন্তু অ্যাপের মধ্যে দেওয়া ম্যাপে কিছুতেই গদখালি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। গন্তব্য হিসেবে ক্রমাগত ভেসে উঠছিল বকখালি (Bakkhali)। অবশেষে একটি ক্যাব পাওয়া গেলেও চালক জানায় যে তাঁদের গন্তব্য যেহেতু শহরের সীমার বাইরে, এবং যেহেতু তাঁরা ‘আউটস্টেশন ট্রিপ’ বেছে নেননি, সেহেতু তাঁদের মাঝপথেই নেমে যেতে হবে। ডায়মন্ড হারবার রোডের উপরই তাঁদের নামিয়ে দেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: ‘সুস্থ থাকতে’ মেঝে খুঁড়ে আট ফুট গর্ত! উত্তরপাড়ায় ভাড়াটিয়ার কাণ্ডে তাজ্জব বাড়িওয়ালি]
পরিস্থিতি বুঝেশুনে চটপট সাহায্যে নেমে পড়েন সাগর। প্রথমেই ঘুরে ঘুরে বিধ্বস্ত তিন পর্যটকের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। মহিলা পর্যটকের জন্য খুঁজে বের করে দেন শৌচাগার। তারপর গদখালি পর্যন্ত একটি ট্যাক্সির ব্যবস্থা করে দেন। সেখানকার হোটেল ম্যানেজারের সঙ্গে নিজে কথা বলে রাখেন, যাতে ওই তিনজন গদখালি পৌঁছে কোনও সমস্যা ছাড়াই হোটেলের ঘর পেয়ে যান। সার্জেন্ট সাগর সিংহকে এসব কাজে সাহায্য করেছেন হোমগার্ড নিরঞ্জন সাহা। সমস্যা মেটার পর সার্জেন্ট সাগর সিংহকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফেসবুকে (Facebook) শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন মার্টিন। এভাবেই পথ হারানো মানুষজনকে সঠিক পথের দিশা দেখিয়ে সাহায্যের বহু নিদর্শনই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের।