shono
Advertisement
BJP

পঞ্চায়েতে ভেঙেছে ঘর! বিধানসভা ভোটের আগে চা বলয়ের কর্মীদের চাঙ্গা করা সম্ভব? সংশয়ে খোদ বিজেপি নেতৃত্ব

পঞ্চায়েত নির্বাচনে চা বলয়ের ভোটব্যাঙ্ক ফেরাতে ইউনিট কমিটিগুলো সক্রিয় ভূমিকা নিতে গেরুয়া ভোটব্যাঙ্ক ফাঁকা হতে শুরু করে।
Published By: Paramita PaulPosted: 09:12 PM Mar 18, 2025Updated: 09:13 PM Mar 18, 2025

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: চা বলয়ে ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন তৃণমূলের কাছে ছিল 'অ্যাসিড টেস্ট'। সেখানে ঘাসফুলের অভাবনীয়  সাফল্য ছন্নছাড়া করে ছেড়েছে গেরুয়া শিবিরকে। পরের বছর ভোটে লোকসভা আসন দখলে রাখতে সক্ষম হলেও দলের প্রাপ্ত ভোট কমেছে। কর্মীদের মনোবল তলানিতে পৌঁছেছে। সেটা বিধানসভা নির্বাচনের আগে আদৌ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে খোদ বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ।

Advertisement

রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০১৯-এর লোকসভা এবং ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখে তৃণমূল নেতৃত্ব সঠিকভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন চা বলয়কে উপেক্ষা করে ডুয়ার্সের আটটি বিধানসভা এলাকা, তার মধ্যে পাঁচটি আলিপুরদুয়ার জেলা এবং তিনটি জলপাইগুড়ি জেলায়। তরাইয়ের দুটি বিধানসভা এলাকা ফাঁসিদেওয়া এবং নকশালবাড়ি-মাটিগাড়ায় নির্বাচনে ভালো ফলাফল সম্ভব নয়। এখানে আদিবাসী চা শ্রমিকদের ভোট বড় ফ্যাক্টর। সুপরিকল্পিতভাবে সেখানে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করে তৃণমূল। পুরোপুরি বামেদের ধাঁচে জলপাইগুড়ি জেলার ৭৮টি এবং আলিপুরদুয়ার জেলার ৬৭টি চা বাগানে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে চা বলয়ের ভোটব্যাঙ্ক ফেরাতে ওই ইউনিট কমিটিগুলো সক্রিয় ভূমিকা নিতে গেরুয়া ভোটব্যাঙ্ক ফাঁকা হতে শুরু করে।

এদিকে তরাইয়ে রয়েছে ৪৭টি চা বাগান। তারমধ্যে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি বিধানসভা এলাকায় রয়েছে অন্তত ২০টি এবং ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা এলাকায় ২৭টি। সেখানেও গেরুয়া শিবিরের সাংগঠনিক শক্তি কেড়েছে তৃণমূল। ২০২২ সালের মহকুমা পরিষদ নির্বাচনে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি এবং ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা এলাকায় একটিও গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করতে পারেনি বিজেপি। যদিও ওই দুটি বিধানসভা আসন এক বছর আগে ২০২১ সালে গেরুয়া শিবির দখল করে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে তাদের প্রাপ্ত ভোট নেমে দাঁড়ায় প্রায় ২৮ শতাংশে। রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে বিজেপি নেতৃত্বের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল মহকুমা পরিষদ তারা দখল করতে চলেছেন। কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে দলের শক্তিক্ষয়ের ছবিটা তারা ধরতে পারেননি। একই ঘটনা হয়েছে ডুয়ার্সের চা বলয়ে। সেখানকার চা-বলয়ে যে আটটি বিধানসভা আসন রয়েছে ২০২১-এর নির্বাচনে সাতটি দখলে নেয় বিজেপি। আলিপুরদুয়ার জেলার পাচটি আসনের একটিও তৃণমূল ঘরে তুলতে পারেনি। পরে অবশ্য আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেন। এবং জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি আসনটি উপনির্বাচনে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল।

রাজনৈতিক মহলের মতে এরপর অনেক জল গড়িয়েছে তোর্সা, রায়ডাক ও মহানন্দা দিয়ে। রাজনৈতিক বিন্যাস পালটেছে। এক সময় বিজেপির চা বলয়ের ভরসা আদিবাসী নেতা জন বারলাকে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সভায়। অন্যদিকে চা বলয়ে সরকারি পরিষেবা বেড়েছে। বন্ধ বাগান খুলছে। শ্রমিকরা জমির পাট্টা পেয়েছে। চা সুন্দরী প্রকল্পে পাকা বাড়ি হয়েছে। বকেয়া প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আদায়ের জন্য লড়াই জারি রেখেছে তৃণমূল। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি গেরুয়া শিবিরের প্রতিকূল হয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে তরাই-ডুয়ার্সের চা বলয়ের আসনগুলো দখলে রাখা অনেকটাই দিবা স্বপ্নের মতো মনে হতে শুরু করেছে নিচুতলার বিজেপি কর্মীদের। স্বভাবতই তারা একরকম হাল ছেড়ে বসে আছেন। রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ অস্বীকার করেননি আলিপুরদুয়ার জেলার তৃণমূল নেতা মৃদুল গোস্বামী। পাশাপাশি তিনি বলেন, "চা শ্রমিকরা বিজেপির সঙ্গে নেই।" তৃণমূলের চা শ্রমিক নেতা স্বপন সরকার দাবি করেন, এবার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি অনিবার্য। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য শ্যামচাঁদ ঘোষ অবশ্য বলেন, "ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা তো করতেই হবে।"

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • চা বলয়ে ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন তৃণমূলের কাছে ছিল 'অ্যাসিড টেস্ট'।
  • সেখানে ঘাসফুলের অভাবনীয়  সাফল্য ছন্নছাড়া করে ছেড়েছে গেরুয়া শিবিরকে।
  • পরের বছর ভোটে লোকসভা আসন দখলে রাখতে সক্ষম হলেও দলের প্রাপ্ত ভোট কমেছে।
Advertisement