shono
Advertisement

খিদে সহ্য করতে না পেরে মিষ্টি খাওয়ার ‘শাস্তি’, নাবালিকার পিঠে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা, গ্রেপ্তার কাকিমা

অত্যাচারিত নাবালিকাকে উদ্ধার করেন গোঘাট থানার ওসি নিজেই।
Posted: 02:45 PM Jul 20, 2023Updated: 02:54 PM Jul 20, 2023

সুমন করাতি, হুগলি: মা-বাবাকে হারিয়েছিল ছোটবেলায়। কাকা-কাকিমার কাছে থাকতে থাকতে কৈশোর যেন হয়ে উঠেছে আতঙ্কময়। এক অসহায় নাবালিকার উপর অমানবিক অত্যাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে চলে এল। আর তাতে শিউরে উঠছেন সকলে। অভিযোগ, হুগলির (Hooghly) গোঘাট থানা এলাকার বাসিন্দা নাবালিকার উপর মারধর, না খেতে দেওয়া, জোর করে কাজ করিয়ে উপোস করিয়ে রাখা হয় মেয়েটিকে। এখানেই অত্যাচার থেমে নেই। পিঠে-সহ প্রায় সারা অঙ্গে গরম খুন্তির ছ্যাঁকার পর ছ্যাঁকা দেওয়ার অভিযোগ কাকিমার বিরুদ্ধে। আর সেই ছ্যাঁকায় (Burn) গোটা পিঠ পুড়ে গিয়ে বড় বড় ফোসকা। যন্ত্রণায় ছটফট করলেও মুখে কিছু বলা যাবেই না। কারণ সেই অসম্ভব আতঙ্ক। ফের অত্যাচার, উপোস থাকা। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তড়িঘড়ি গোঘাট থানার ওসি শৈলেন্দ্রনাথ উপাধ্যায় নিজেই উদ্যোগ নিয়ে এই নাবালিকাকে উদ্ধার করে আনেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযুক্ত কাকিমাকে। মেয়েটিকে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থাও করেছেন।

Advertisement

কিন্তু ঘটনাটা কী? ছোট এই নাবালিকার নাম সৃজনী চট্টোপাধ্যায়। বাবা তন্ময় চট্টোপাধ্যায় বেশ কয়েক বছর আগেই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। আর মা-ও ১০ বছর আগেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন। তার খোঁজ নেই। নাবালিকা সৃজনী দাদু ও ঠাকুমার কাছেই থাকত। কিন্তু দাদুও বেশ কয়েক বছর আগেই মারা যায়। বাড়িতে কাকা-কাকিমার ফাইফরমাস খেটে গোঘাটের ভগবতী বালিকা বিদ্যালয় সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে সৃজনী। প্রচন্ড কষ্ট স্বীকার করেই তার পড়াশোনা করা।

[আরও পড়ুন: উন্মুক্ত বক্ষ বিভাজিকা, খোলা চুল! গোলাপি পোশাকে ঋতাভরী যেন ‘বার্বি ডল’]

পড়াশোনা করার তার দারুণ ইচ্ছা। কিন্তু কাকু-কাকিমা কোনওদিনই সৃজনীকে সেভাবে ভালবাসেননি বলে অভিযোগ। উলটে বাড়ির কাজ থেকে দোকান বাজার সবই এই নাবালিকা মেয়েটিকে দিয়ে করায়। কাজে সামান্য ত্রুটি হলেই খেতে দেওয়া হতো না সৃজনীকে। উপোস থাকতে হতো। আবার পান থেকে একটু চুন খসলেই এরকমই অত্যাচারের (Torture)শিকার হত সৃজনী। কিন্তু সেই ভয়ংকর অত্যাচারের ভয়ে কোনও প্রতিবাদ করতে পারত না সৃজনী। বাইরের কাউকেই বলতে পারত না সে। তাই কষ্ট সহ্য করেই সে থাকত বাড়িতে।

জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সারাদিন উপোস ছিল সৃজনী। সারাদিনই খেতে দেয়নি কাকু-কাকিমা। বিকালের দিকে খিদেতে ছটফট করতে থাকে ছোট্ট সৃজনী। বাধ্য হয়েই খিদে সহ্য করতে না পেরে ফ্রিজ খুলে দুটি মিষ্টি খেয়ে নেয় মেয়েটি। আর এতেই কাকিমা সারদামনি চট্টোপাধ্যায় ছোট্ট সৃজনীর উপর সেই পাশবিক অত্যাচার চালায়। অভিযোগ, মারধরের পাশাপাশি খুন্তি গরম করে সৃজনের পিঠে ছ্যাঁকা দিয়ে দেয়। ছ্যাঁকার পর ছ্যাঁকায় ছটফট করতে থাকে সৃজনী। কিন্তু বলার উপায় নেই তাহলে আবারও মারধর হবে। ওই অবস্থাতেই বুধবার সৃজনী বিদ্যালয়ে যায়। কারণ পিঠের সেই বড় বড় ফোসকাগুলি গলে গিয়ে যন্ত্রণা হচ্ছিল তার। তাই অস্থির হয়ে ওঠে। সৃজনীর এই ছটফট ও অস্থিরতা চোখে পড়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার।

[আরও পড়ুন: কলকাতায় দিকে দিকে হানা ইডি’র, ‘কালীঘাটের কাকু’র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তল্লাশি]

তখনই জানতে পারেন সব ঘটনা। এই অবস্থায় তার পিঠের ফোসকা গলে যায়। ছটফট করতে থাকে। এই দৃশ্য দেখে ও ঘটনার কথা জেনেই প্রধান শিক্ষিকা তখনই বিদ্যালয় থেকেই গোঘাট থানায় খবর দেন। গোঘাট থানার ওসি জানতে পেরে নিজেই ছুটে যান। তদন্ত শুরু করেন। কিশোরীর উপর অত্যাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত সারদামনি চট্টোপাধ্যায়কে প্রবল ভর্ৎসনা করেন ও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর নাবালিকার নিরাপত্তার কথা ভেবে অন্যত্র তাঁর থাকার ব্যবস্থা করে দেন ওসি নিজেই। ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় নিন্দার ঝড় সর্বত্র।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement