shono
Advertisement

ত্রাতা পুলিশ, শ্বশুরবাড়ির শিকল ভেঙে পালিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেন বধূ

অ্যাডমিট কার্ড ছাড়াই তাঁকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হয়।
Posted: 12:39 PM Mar 17, 2023Updated: 12:44 PM Mar 17, 2023

শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: ‘‘স্যর, আমি সুলতানা খাতুন। আমি তিলডাঙা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। নিউ ফরাক্কা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আমার পরীক্ষার সেন্টার পড়েছে। আজ ইংরেজি পরীক্ষা। আমার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকেরা আমাকে পরীক্ষায় বসতে দিচ্ছে না। আমার বই ও অ্যাডমিট কার্ড কেড়ে নিয়েছে ওরা। প্লিজ স্যর, আমাকে পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করে দিন।’’ বৃহস্পতিবার সকালে একটি মেয়ের কান্নাকাটি দেখে চমকে উঠেছিলেন ফরাক্কা থানার আইসি (IC) দেবব্রত চক্রবর্তী। তারপর মেয়েটিকে বসিয়ে সব শুনে নিজেদের গাড়িতে তুলে পুলিশ সুলতানাকে নিয়ে আসে পরীক্ষাকেন্দ্রে। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির বাধা অতিক্রম করে অবশেষে পুলিশের সাহায্যে অবশেষে উচ্চমাধ্যমিক (Higher Secondary) ইংরেজি পরীক্ষায় দিতে পারল সুলতানা খাতুন। তাতেই খুশি সে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে ফরাক্কার (Farakka) বেনিয়াগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের বিন্দুগ্রামের বাসিন্দা বান্টি শেখের সঙ্গে তিলডাঙা গ্রামের সুলতানা খাতুনের বিয়ে হয়। সুলতানার স্বামী বান্টি শেখ পরিযায়ী শ্রমিক (Migrant Labourer)। সুলতানা তিলডাঙা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। বিয়ের সময় বান্টির পরিবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সুলতানার উচ্চশিক্ষায় কোনও আপত্তি থাকবে না তাদের। কিন্তু এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হতেই বান্টি ও তার পরিবারের লোকেরা সুলতানাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে বাধা দিতে শুরু করে। প্রথমদিন কোনওরকমে পরীক্ষা দিয়ে এলেও তা চরম রূপ ধারণ পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পর।

[আরও পড়ুন: বাম জমানায় চিরকুটে চাকরি পেয়েছেন কারা? তালিকা তৈরির নির্দেশ ব্রাত্যর]

অভিযোগ, বুধবার রাত থেকেই বান্টি ও তার মা সুলতানাকে একটি ঘরে বন্ধ করে রেখেছিল। বৃহস্পতিবার সকালে খাবার দিতে দরজা খুলতেই লুকিয়ে সুলতানা শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে টোটো ধরে পালিয়ে আসে ৮ কিলোমিটার দূরে বাবার বাড়ি তিলডাঙায়। সেখান থেকে সটান হাজির হয় ফরাক্কা থানার আইসি দেবব্রত চক্রবর্তীর কাছে। সুলতানা আইসি-কে জানায় সে যাতে পরীক্ষায় বসতে না পারে সেই জন‌্য বান্টি সব বইপত্র ও অ্যাডমিট কার্ড (Admit Card) বাড়ির কাছে একটি জঙ্গলে ফেলে দিয়েছে। যদিও পুলিশ সুলতানার কথা মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছে চিরুনি তল্লাশি চালিয়েও সুলতানার অ্যাডমিট কার্ড, স্কুলের পোশাক উদ্ধার করতে পারেনি।

[আরও পড়ুন: চাকরি বাতিল সংক্রান্ত SSC’র ধারা ‘অবৈধ’ ঘোষণার দাবিতে মামলা, চেয়ারম্যানকে সশরীরে তলব]

এদিকে, সুলতানা পালিয়ে পুলিশের কাছে এসেছে, সেই খবর পেয়ে বান্টি ও তার পরিবারের লোকেরা বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। অ্যাডমিট কার্ড ছাড়া পরীক্ষায় বসা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয় সুলতানার। এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন আইসি দেবব্রত চক্রবর্তী। নিউ ফরাক্কা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সুলতানা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারে, স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার ব্যবস্থা করার আবেদন জানান তিনি। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে থাকা ‘ডেসক্রিপটিভ রোল’ দেখে অ্যাডমিট কার্ড ছাড়াও পরীক্ষায় বসার জন্য অনুমতি দেয় সুলতানাকে। এদিন নির্বিঘ্নেই উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা দেয় সুলতানা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুলতানা যাতে বাকি পরীক্ষা নির্বিঘ্নে দিতে পারে তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup রাজধানী এক্সপ্রেস toolbarvideo ISL10 toolbarshorts রোববার