সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘জিন্দেগি লম্বি নেহি, বড়ি হোনা চাহিয়ে’। বিখ্যাত ‘আনন্দ’ ছবির এই সংলাপের কথাই যেন মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিখ্যাত কত্থক নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা দাশগুপ্ত। বয়স তাঁর ৪৮ বছর। মাত্র ৬ বছর বয়স থেকেই মঞ্চে নৃত্য প্রদর্শন করে চলেছেন। আর তাঁর সেই পারফরম্যান্সে বাধা দিতে পারেনি ক্যানসারও। মারণ রোগকে অবহেলায় সরিয়ে রেখে মঞ্চে হাত ও চোখের অনন্য ভাষায় রচনা করেছেন জীবনকাব্য।
গত আগস্টে মঞ্চে ছাপ তিলকের সঙ্গে নাচ করার সময়ই তিনি দর্শকদের চমকে দিয়েছিলেন মাথার চুল খুলে ফেলে। পরচুলার আড়ালে ক্যানসারের নির্মম ছোবলকে লুকিয়ে রাখতে চাননি তিনি। সাধারণ ধারণা অনুযায়ী, কত্থকের মতো ধ্রুপদী নৃত্যের প্রদর্শনের সময় মাথায় একঢাল চুল থাকলে তা আরও দৃষ্টিনন্দন হয়। কিন্তু অলকানন্দা সেই স্টিরিওটাইপকে ভেঙে কেমোথেরাপির পরদিনও মঞ্চে এসে পারফর্ম করেছেন। হ্যাঁ, মুণ্ডিত মস্তকেই।
[আরও পড়ুন: ‘খাইকে পান বেনারসওয়ালা’, অভূতপূর্ব স্বাদে ভারতজয়ী বিখ্যাত বেনারসি পান এবার পেল GI ট্যাগ]
স্টেজ ওয়ান ওভারিয়ান ক্যানসারে ভুগছেন অলকানন্দা। যে ক্যানসারের নাম শুনলেই সাধারণত মানুষ শঙ্কায় অর্ধমৃত হয়ে পড়েন, সেখানে অলকানন্দা চিকিৎসকদের বলেছিলেন, কয়েকদিন পরে অস্ত্রোপচার করতে। সামনে একটি বড় অনুষ্ঠান রয়েছে তাঁর। যা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। ক্যানসার যত দ্রুত অস্ত্রোপচার হবে তত তা আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কমবে। কিন্তু নিজের পারফরম্যান্সের জন্য সেই বিপুল ঝুঁকিও অনায়াসে নিয়েছিলেন অলকানন্দা। কেমোর পরে মাথার চুল পড়ে যাচ্ছিল বলে নিজেই সব চুল কেটে ফেলেন।
তাঁর কথায়, ”কাঠিন্যের জন্য অল্পবিস্তর পাগলামি তো করতেই হয়। আপনি রোজ বাঁচেন, মরেন একদিনই। চোখ খুলতে পারছি, নিঃশ্বাস নিতে পারছি মানেই জীবন আপনাকে আরও একটা দিন দিয়েছে। সেই দিনটাকে আমি স্রেফ উদ্বিগ্ন হয়ে নষ্ট করে দেব কেন?” তবে অলকানন্দা জানাচ্ছেন, মাঝে মাঝে লুকিয়ে কাঁদেন তিনি। প্রশ্ন করেন, ”হে ঈশ্বর, আমিই কেন?” কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেন। ঝাঁপিয়ে পড়েন কত্থকের জগতে। হাত ও চোখের মুদ্রায় ফুটিয়ে তোলেন জীবনের জয়গান।