সুব্রত বিশ্বাস: ‘মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা।’ অতুল প্রসাদের এই গান বাংলা ভাষার প্রতি আবেগ ও গর্বের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল বাঙালির ধমনীতে। এবার খোদ পশ্চিমবঙ্গে সেই বাংলা ভাষাকেই সকৌশলে বর্জন করছে রেল। সংস্থাটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে থেকে বিদায় দেওয়া হচ্ছে বাংলাকে। এটা চূড়ান্ত বেআইনি সিদ্ধান্ত ও আইনগতভাবে অপরাধ বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
[আরও পড়ুন: মাছের বদলে জালে উঠল কুমিরছানা! চক্ষু চড়কগাছ পাথরপ্রতিমার মৎস্যজীবীর]
অভিযোগ, লিলুয়া ওয়ার্কশপের মতো গুরুত্বপূর্ণ ডিপো থেকে বাংলা ভাষাকে সরিয়ে দিচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। এই শপের গেট থেকে বিভিন্ন বিভাগের যাবতীয় স্থায়ী পোষ্টার থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে বাংলা। হিন্দি আর ইংরেজি দুই ভাষাতে লেখা হচ্ছে যাবতীয় সাইন বোর্ড, গেট। প্রাক্তন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান বাসুদেব আচার্য, চূড়ান্ত বেআইনি কাজ বলে বর্ণনা করে জানান, রেলমন্ত্রীকে তিনি লিখিতভাবে প্রতিবাদ পাঠাবেন। এটা কেন্দ্রের সুপরিকল্পিত নীতি। এক ভাষা, এক জাতিতে বিশ্বাসী কেন্দ্র সরকার হিন্দিকে প্রাধান্য দিতে বেআইনি পদক্ষেপ করছেন। তিনি বাংলার মানুষকে প্রতিবাদের ঝড় তুলতে আহ্বান জানিয়েছেন। মন্ত্রী লক্ষীরতন শুক্লার কথায়, রাজ্য থেকেও বাংলা ভাষাকে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত কাদের, এটা আগে তদন্ত করে বের করতে হবে। পাশাপাশি তিনি জানান, রাজ্যের ক্রীড়াবিদদের তরফে তিনি এনিয়ে কেন্দ্রের কাছে প্রতিবাদ জনাবেন।
রেলের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ শুরু করেছে কর্মী সংগঠনগুলি। পূর্ব রেলের মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষ বলেন, ‘থ্রি ল্যাংগুয়েজ সিস্টেম’ রেলে আইনগত। প্রথমেই থাকবে আঞ্চলিক ভাষা, এরপর রাষ্ট্রভাষা, তারপর আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি। বেশ কয়েক মাস আগে আসানসোল স্টেশনের থেকে বাংলা ভাষা তুলে দেওয়ার পর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এরপর আবার বাংলা সংযোজিত হয়। দুর্ভাগ্য আসানসোলের ডিআরএম একজন বাঙালি। তাঁর উপস্থিতিতে বাংলাকে সরানো হয়েছিল। পূর্ব রেলের মেনস কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিনোদ শর্মা বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ভাষা বিভাগের নির্দেশ, প্রথমে আঞ্চলিক ভাষা, এরপর হিন্দি তারপর ইংরেজি। প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি এধরনের কাজ করার নির্দেশ যিনি দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তুলেছেন তিনি। বাংলা ভাষাকে সরিয়ে দেওয়ার স্পর্ধা দেখানোর প্রতিবাদে সরব হয়েছে নানা সংগঠন। অবিলম্বে প্রতিবাদ আন্দোলনে নামবে তারা। পূর্ব রেলের তরফেও এটা অনুচিত ও আইন বিরুদ্ধ বলে জানানো হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা আশ্বাস দিয়েছে পূর্ব রেল।