কল্যাণ চন্দ, বহরমপুর: ছোট ছেলের পাঠানো ভাড়াটে গুন্ডাদের হাতে গুলিবিদ্ধ বৃদ্ধ বাবা। সম্পত্তির লোভে এই কাণ্ড। গুলিবিদ্ধ বাবা নিজের ছেলের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। রবিবার সাতসকালে বহরমপুরে ওই গুলি চলার ঘটনায় হতবাক এলাকার মানুষ। রবিবার সকাল পৌনে সাতটা নাগাদ ওই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ল বহরমপুরের সৈদাবাদের জোড়া শিবমন্দির এলাকায়। সুশান্তকুমার মণ্ডল (৭৩) নামে রক্তাক্ত ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তদন্ত শুরু করে পুলিশ। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সূর্যপ্রতাপ যাদব বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই বাবা-ছেলের জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদ চলছিল। সেই ঘটনার জেরেই ওই গুলি চলেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ছেলের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তাছাড়া ওই দুই দুষ্কৃতীর খোঁজেও তল্লাশি চালাচ্ছে বহরমপুর থানার পুলিশ।’’
হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল গুলিবিদ্ধ বৃদ্ধের পাশে কেউ নেই। বিছানায় একাই পড়ে রয়েছেন বৃদ্ধ সুশান্তবাবু। স্ত্রীর মৃত্যুর পর দুই ছেলেই ভরসা ছিল বৃদ্ধের। তাঁদের মধ্যে ছোট ছেলের ভাড়া করা গুন্ডাদের হাতে গুলিবিদ্ধ হন ওই বৃদ্ধ বলেই অভিযোগ। রবিবার সকালে সৈদাবাদের সুশান্তকুমার মণ্ডল সাইকেলে গঙ্গার দিকে রওনা দিয়েছিলেন। বাড়ি থেকে এলাকার জোড়া শিবমন্দির পার হতেই তাঁর সাইকেলের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে একটি মোটরবাইক। বাইকের পিছনে বসে থাকা এক যুবক হঠাই সুশান্তবাবুকে লক্ষ্য করে এক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। বাঁ কাঁধে গুলি লেগে সাইকেল থেকে পড়ে যেতেই তাঁকে লক্ষ্য করে আরও একটি গুলি ছোড়া হয়। কিন্তু সেই গুলি পিস্তল থেকে বের হয়নি বলেই রক্ষা পেয়েছেন ওই বৃদ্ধ।
[আরও পড়ুন: আইফোন অর্ডার করে হেনস্তার শিকার! ক্রেতাকে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে Flipkart]
হাসপাতালে বসে সুশান্তবাবু জানান, হেলমেট পরে ছিল ওই দুই যুবক। তাই তাদের চিনতে পারেননি। তবে দ্বিতীয় গুলিটি লাগলে নির্ঘাত তাঁর মৃত্যু হত। জ্ঞানত কারও ক্ষতি করেননি বলেই দ্বিতীয়বারের জন্য তিনি বেঁচে গেলেন বলে জানান। ওই ঘটনার পিছনে তাঁর ছোট ছেলে সৌমেন মণ্ডলের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সুশান্ত মণ্ডল বলেন, গত ২০০৭ সালে তাঁর ছোট ছেলে সৌমেন তাঁকে এলোপাথাড়ি কুপিয়েছিল। সেই যাত্রায় তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। সৌমেন বিয়ে করলেও কোনও কাজ করে না। তাঁর জমানো টাকাপয়সা উড়িয়ে দিত। বললেই গন্ডগোল হত। অন্যের কাছে বাড়ি বন্ধক দিয়ে দিয়েছিল সৌমেন।
প্রায় দেড় কোটি টাকা দিয়ে সেই বাড়ি ছাড়িয়েছেন। পেশায় ব্যবসায়ী সুশান্তবাবুর স্ত্রী কয়েক বছর আগেই মারা যান। বড় ছেলে ভিন রাজ্যে চাকরি করেন। ছোট ছেলে সৌমেন বহরমপুরের অন্য একটি বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। ফলে একাই বাড়িতে থাকতেন সুশান্তকুমার মণ্ডল। এদিন আহত বৃদ্ধ বলেন, তাঁর সম্পত্তি হাতাতে খুন করার চেষ্টা করেছে ছোট ছেলে। হাসপাতালে একাই রয়েছেন সুশান্তবাবু। তিনি জানান, তাঁর দুই ছেলে ছাড়া পৃথিবীতে কেউ নেই। চশমার ফাঁকে চোখ দুটো ভিজে গেল সুশান্তবাবুর।