অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: সাঁতরাগাছি ঝিলে আসা পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে গিয়েছে। ঝিলে প্রত্যেক বছর যেখানে প্রায় দশ হাজার পাখি আসে সেখানে গতবছর থেকেই এখানে পরিযায়ী পাখি আসার সংখ্যা কমে গিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে গতবছর মাত্র ছ’শো থেকে এক হাজার পাখি এসেছিল সাঁতরাগাছি ঝিলে। তাই এবার পরিযায়ী পাখিদের সাঁতরাগাছি ঝিলে স্বাগত জানাতে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই ঝিল পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়ে যায়। পরিযায়ী পাখিদের জন্য তৈরি করা হয়েছে উপযুক্ত পরিবেশ। বনদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে হাওড়া পুরসভার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ঝিল পরিষ্কারের কাজ করেছে একটি বেসরকারি সংস্থা। হাওড়া সিটি পুলিশের উদ্যোগেও ঝিল সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে। সাঁতরাগাছি ঝিল থেকে পরিষ্কার করা হয় আগাছা। পাশাপাশি পাতা ও কচুরিপানা দিয়ে সাঁতরাগাছি ঝিলে তৈরি করা হয়েছে আইল্যান্ড। পরিযায়ী পাখিরা যাতে এই আইল্যান্ডে এসে বসতে পারে সেরকমই পরিবেশ তৈরি করার কাজ হয়েছে ঝিলে।
[আরও পড়ুন: স্বাভাবিক হওয়ার পথে কাশ্মীর! বৃহস্পতিবার থেকেই যেতে পারবেন পর্যটকরা]
এই জলাশয়টি প্রায় ১৩ লক্ষ ৭৫ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে রয়েছে। উল্লেখ্য, বিদেশ থেকে প্রায় ছয় থেকে সাত রকমের পাখি আসে এই সাঁতরাগাছি ঝিলে। চিন ও রাশিয়ার মতো দেশে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে অতিরিক্ত ঠান্ডা পড়ার জন্যই পরিযায়ী পাখিরা সেখান থেকে সাঁতরাগাছি, নলবনের মতো ঝিলে চলে আসে। হাওড়ার প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক তথা পাখি বিশেষজ্ঞ প্রসেনজিৎ দাঁ জানালেন, প্রায় ছয় থেকে সাত রকমের পাখি সাঁতরাগাছি ঝিলে আসে। গারোয়াল, নর্দান পিন্টেলের মতো বিদেশি পাখি হিমালয় পর্বত পেরিয়ে সাঁতরাগাছি ঝিলে চলে আসে। এছাড়া সাঁতরাগাছি ঝিলে অন্যান্য পাখিদের মধ্যে রয়েছে ছোট সরাল, গিরিয়া হাঁস, জলপিপি, ডাহুক, গো বক, কোঁচ বক, সাধারণ বালুবাটান, সুইনহো, কাদাখোঁচা, সাদা খঞ্জন, সাদাবুক মাছরাঙা, বামুনিয়া হাঁস। এই সমস্ত পাখিরা মূলত চিন ও রাশিয়া থেকেই উড়ে আসে সাঁতরাগাছি ঝিলে।
সুদূর বিদেশ থেকে প্রত্যেক বছর ঠিক নিজেদের জায়গা চিনে এরা চলে আসে ঝিলে।
সাঁতরাগাছি ঝিলকে ঠিকমতো পরিষ্কার না করা কিংবা সঠিক ভাবে আইল্যান্ড তৈরি না করার জন্যই পরিযায়ী পাখিরা এখানে এসে ফিরে যায়। পরিযায়ী পাখিরা সাঁতরাগাছি ঝিলে বসতে না পেরে তারা আবার উড়ে নিজেদের জায়গায় ফিরে যায়। গতবছর এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় এবার তৎপরতার সঙ্গে পরিষ্কার করা হয় সাঁতরাগাছি ঝিল। প্রথমে পরিষ্কার করা হয় ঝিলের জল। জল থেকে পচা কচুরিপানা সরিয়ে ফেলা হয়।
[আরও পড়ুন: এবার দিঘায় বেড়াতে গিয়ে এই মজা থেকে বঞ্চিত হবেন, কী জানেন?]
প্রসঙ্গত, রেলের জমিতেই রয়েছে এই ঝিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি করেন বনদপ্তর ও হাওড়া পুরসভার কর্মীরা। তাঁরাই ঝিল পরিষ্কারের কাজটি করেন। তাই এবারও হাওড়া পুরসভার কর্মী ও বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা যৌথ উদ্যোগে সাঁতরাগাছি ঝিল পরিষ্কারের কাজটি করছেন। নভেম্বর মাসের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সাঁতরাগাছি ঝিলে এসে বসে এই পরিযায়ী পাখিরা। এদিকে সাঁতরাগাছি জলাশয়কে বাঁচাতে ও পরিযায়ী পাখিদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে এখানকার ঝিল সংস্কারে উদ্যোগী হল হাওড়া সিটি পুলিশ। পরিচ্ছন্নতা, সবুজায়ন ও ঝিলে আগত পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে এগিয়ে এসেছেন হাওড়ার পুলিশ কর্তারা। পুলিশ অগ্রাধিকার দিয়ে এই সাঁতরাগাছি ঝিলের সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। ঝিলটি সংস্কারের ব্যাপারে রেলের কর্তাদের সঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা আলোচনা করেন। বর্তমানে ঝিল সংস্কারের দায়িত্ব রেলের নয় বলে জানান আধিকারিকরা।
The post পরিযায়ী পাখি টানতে সাজছে সাঁতরাগাছি ঝিল, তৈরি হচ্ছে আইল্যান্ড appeared first on Sangbad Pratidin.