সৈকত মাইতি, তমলুক: পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সমবায় নির্বাচনে পাঁশকুড়ায় (Panskura) বিরোধীদের বহু পিছনে ফেলে বড় সাফল্য পেল রাজ্যের শাসক দল। মঙ্গলবার ভোটগণনা শেষে সর্বাধিক আসনে জয়ী হল তৃণমূল। সেইসঙ্গে বামেদের পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নিল বিজেপি। এদিন জয়ের পর বিপুল উল্লাসে ফেটে পড়েন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় একের পর এক সমবায় নির্বাচনের মধ্যে মঙ্গলবার পাঁশকুড়া ব্লকে আরও একটি সমবায় নির্বাচন ঘিরে তৈরি হয় টানটান উত্তেজনা। এমন পরিস্থিতিতে পাঁশকুড়া ব্লকের হাউরের দশাং সমবায় সমিতির নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়। জানা গিয়েছে, গতবারে দশাং সমবায় সমিতির নির্বাচনে তৃণমূল (TMC) দখল করেছিল। যার মোট ভোটার সংখ্যা বর্তমানে ১২৯৮। কিন্তু লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটের নিরিখে হাউর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অধিকাংশ বুথে শাসকদল তৃণমূলকে বেশ খানিকটা পিছনে ফেলে বিজেপি সামনে চলে আসে। স্বাভাবিক কারণেই আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দশাং সমবায় সমিতির নির্বাচন ঘিরে ছিল টানটান উত্তেজনা।
[আরও পড়ুন: ঝাড়গ্রাম সফরে গিয়ে ঘোষবাড়িতে সুকান্ত, খেলেন দিলীপের মায়ের হাতে তৈরি পিঠে]
এদিকে, এই সমবায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই সমবায় সমিতির মোট ৫২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ৫১টি আসনে প্রার্থী দেয়। একইভাবে প্রধান বিরোধী হিসাবে বিজেপি প্রার্থী দেয় ৪৮টিতে এবং সিপিআইএম ৪০টিতে প্রার্থী দেয়। দিনভর টানটান উত্তেজনার মধ্যেই ভোট পর্ব মিটিয়ে এদিন বিকেল গড়িয়ে যখন ভোটগণনা শুরু হল তখনই পক্ষ-বিপক্ষের তীব্র চাপানউতোর শুরু হয়। ভোটগণনা কেন্দ্রের সামনেই বিজেপি এবং তৃণমূল স্লোগান চলাকালীন আচমকাই দু’পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও বা পরবর্তী ক্ষেত্রে পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
অন্যদিকে, ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, বিরোধীদের অনেকটাই পিছনে ফেলে ফের বিপুল আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। মোট ৫২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা ৪৩টি আসনে জয়লাভ করেন। তবে মাত্র ৬টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে বিজেপি (BJP)। সেইসঙ্গে সিপিএম ২টি এবং ১টিতে নির্দল প্রার্থী জয়লাভ করেন। বিজেপির অভিযোগ, শাসকদল তৃণমূল এলাকায় বহিরাগতদের নিয়ে এসে বিরোধীদের চাপে রাখতে ঝামেলা বাধিয়েছে। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে বিরোধীদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে তৃণমূল।
বিজেপির হাউর মণ্ডল সভাপতি সমীরণ দুয়ারী অভিযোগ করে বলেন, ‘‘চারিদিকে হিংসা সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করে যেকোনও নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে নেওয়া তৃণমূলের কালচার হয়ে উঠেছে। সামান্য সমবায় নির্বাচনেও যার ব্যতিক্রম হয়নি। বহিরাগত দুষ্কৃতীদের এনে আজকে যেভাবে তাণ্ডব চালানো হল, তাতে সাধারণ বিজেপি কর্মীদের প্রাণসংশয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের এই জয় নৈতিক জয়। আগামিদিনের পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনেকটাই জয় প্রশস্ত করল। লড়াই হবে সমানে সমানে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে (Panchayat Election) জয় হবে বিজেপির।’’
এই বিষয়ে পাঁশকুড়া ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুজিত রায় বলেন, ‘‘বিজেপি যতই কুৎসা, অপপ্রচার করুক, এদিনের এই সমবায় নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে। কিন্তু তারপরও নির্বাচনে হার নিশ্চিত বুঝে ঢিল ছুড়ে আমাদের কর্মীদের প্ররোচিত করা হয়েছে। আর বহিরাগত বলতে যদি বলতে হয় তাহলে বিজেপিরও অনেক নেতাই আজকে হাউরে এসেছিল। তারাও কি তাহলে দুষ্কৃতী?’’ এদিকে, এই বিপুল জয়ের উল্লাসে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। সবুজ আবির উড়িয়ে এলাকাজুড়ে বিজয় মিছিল বের হয় তৃণমূলের।