সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: বছর তিন আগের কথা। পাহাড়ে গিয়ে চরম হেনস্তার মুখে পড়তে হয়েছিল বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghosh)। দার্জিলিংয়ের চকবাজারে জনতার ঘেরাটোপে মারধরের কথা বোধহয় সহজে ভুলতে পারেননি তিনি। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে অদূর ভবিষ্যতে? রবিবার পাহাড়ের একদা প্রতাপশালী নেতা বিমল গুরুংয়ের (Bimal Gurung) বক্তব্যে যে তারই প্রতিফলন। সাড়ে তিন বছর পর পুরনো গড়ে সভা করতে গিয়ে তাঁর হুঙ্কার, ”গোর্খাদের সঙ্গে প্রতারণা করলে, তার ফল কী হয়, রাজু বিস্তা, দিলীপ ঘোষদের ভালভাবে বুঝিয়ে দেব।” তাঁর ছাব্বিশ মিনিটের বক্তব্যের বেশিরভাগটাই ছিল বিজেপি বিরোধিতা।
তিন বছর অজ্ঞাতবাসে থাকার পর আচমকা চলতি বছর দুর্গাপুজোর পঞ্চমীতে কলকাতায় দেখা দিয়েছিলেন একদা পাহাড়ে দাপুটে মোর্চা নেতা বিমল গুরুং। সল্টলেকের গোর্খা ভবনে ঢুকতে বাধা পেয়ে কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপিকে কার্যত তুলোধোনা করেন তিনি। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিযোগ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অকুণ্ঠ সমর্থন করেন গুরুং। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে অঘোষিত জোটে আসার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। তবে তাঁর এই প্রত্যাবর্তনকে মোটেই ভাল নজরে দেখেনি বর্তমানের মোর্চা নেতৃত্ব। মোর্চা সভাপতি বিনয় তামাং, জিটিএ চেয়ারম্যান অনীত থাপারা গুরুংয়ের অস্তিত্বই কার্যত উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছিলেন গুরুং তাঁদের কাছে ‘ক্লোজ় চ্যাপটার।’ মুখ্যমন্ত্রীও তাঁদের কলকাতায় ডেকে আশ্বাস দিয়েছেন, পাহাড়ের কাজকর্ম এখন যেভাবে চলছে বিনয়, অনীতদের নেতৃত্বে সেভাবেই চলবে।
[আরও পড়ুন: সাক্ষাত দেবদূত! মুর্শিদাবাদের মৃত আদিবাসী যুবকের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য মন্ত্রী জাকির হোসেনের]
তবে গুরুং কিন্তু অন্তরালে ঘর গোছানোর চেষ্টায় মগ্ন। রীতিমতো পরিস্থিতি বুঝেশুনে তবেই রবিবার শিলিগুড়িতে জনসভার পরিকল্পনা করেন তিনি। তার আগে সবটা বুঝতে ডেপুটি রোশন গিরিকেও তিনি পাঠান পাহাড়ে। এরপর আজ গুরুং নিজে গান্ধী ময়দানে সভা করলেন। আর তাতেই বোঝা গেল, এখনও তাঁর জনপ্রিয়তায় ততটা ভাঁটা পড়েনি। ভিড় ছিল ভালই। এখান থেকেই তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে সুর আরও চড়িয়ে বলেন, ”নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমাদের সমস্যা সমাধানের। কিন্তু কোনও কিছু হয়নি। অনেকবার আলোচনা হয়েছে, ফল শূন্য। গোর্খাদের কথা ভাবেইনি কেউ। গত ১২ বছরে পাহাড়ে বিজেপি জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেছিলাম। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। এবার রাজু বিস্তা, দিলীপ ঘোষদের বুঝিয়ে দেব, গোর্খাদের সঙ্গে প্রতারণা করলে ফল কী হয়।” পাশাপাশি, তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে আগামী নির্বাচনে তৃণমূলকে বেশি ভোটে জেতানোর আহ্বান জানান। বলেন, ”আমরা সবরকমভাবে তৃণমূলের হয়ে কাজ করব এখানে। আপনারাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিততে সাহায্য করুন।”
[আরও পড়ুন: ‘কালীঘাটের টালির ছাদের নিচে জমছে কাটমানি!’, কিষাণ মোর্চার সভা থেকে তোপ দিলীপের]
তবে এদিনের সভায় অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, এবার শিলিগুড়ির বুকে কোনওভাবেই গুরুংকে বাধা দেওয়া হয়নি। এর আগে যতবার তিনি শিলিগুড়িতে সভা করেছেন, খুব সহজে কখনওই তা হয়নি। পুলিশ, প্রশাসনের বাধা পেরিয়ে তা করতে হয়েছে। অথচ এই মুহূর্তে UAPA মামলায় অভিযুক্ত গুরুংকে রবিবারের সভা করতে কোনও বাধার মুখেই পড়তে হল না। এ নিয়ে প্রশ্নও উঠছে নানা মহলে।