নন্দন দত্ত, সিউড়ি: কাকার মত ভাইপোও যে কখন খুনি হয়ে উঠেছে, বুঝতেই পারেনি খয়রাশোলের আহম্মদপুর গ্রাম। ছোট্ট গ্রামের মীরপাড়া। সেখানেই মসজিদের পাশে খুনের (Murder) অভিযোগে ধৃত শেখ সলমনের বাড়ি। ওই বাড়ি গত ২০১৬ সালে বোমা বিস্ফোরণে (Blast) উড়ে যায়। তাতে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছিল শেখ হাফিজুল ও শেখ লিটন ওরফে তারিক হোসেনের। অভিযোগ ছিল সলমনের কাকা হাফিজুল এলাকার তৃণমূল (TMC)নেতা বুড়ো ওরফে আবদুর কাদেরকে খুন করে এলাকাছাড়া ছিল। বেশ কয়েক বছর পর প্রচুর বোমার মশলা নিয়ে গ্রামে ফেরে। তার পরিণতি হয় মর্মান্তিক।
[আরও পড়ুন: রানির মৃত্যুই কি রাজপরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দেবে হ্যারি-মেগানকে? অপেক্ষায় ব্রিটেন]
হাফিজুল যখন গ্রামে ফেরে, তখন তার দাদা শেখ জাবির হোসেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। তাঁরই বাড়িতে যে বোমার মশলা মজুদ আছে, কেউ ভাবতে পারেনি। এমনকি হাফিজুল ঘরে আত্মগোপন করে আছে, তাও বোঝেনি কেউ। ছোট ভাই লিটন গোপনে খাবার দিতে যেত হাফিজুলকে। সে সময়ে এক রাতে বিস্ফোরণ ঘটে। ছাদ ভেঙে পড়ে বাড়ির। চাপা পড়ে হাফিজুল, লিটন – দু’জনেরই মৃত্যু হয়। সেই ঘরের ছেলে সলমনের বিরুদ্ধেও এবার একই অভিযোগ উঠল। গ্রামেরই বন্ধুকে কলেজ থেকে ডেকে এনে খুন করার অভিযোগ।
আহম্মদপুরের ছোট্ট মীরপাড়ার সলমন, সালাউদ্দিন ওরফে জয় সকলেই প্রায় সমবয়সি। জয় এলাকায় থাকত না। বাবার খাদান ব্যবসার জন্য মামার বাড়ি মল্লারপুরে থাকত। কিন্তু গ্রামে ফিরলে জয়দের বাড়ির সামনেই যে ভলিবল খেলার মাঠ আছে সেখানেই বসে আড্ডা দিত সকলে। সলমন শনিবার সকালেও তাদের সঙ্গে বসে আড্ডা দিয়েছ। তাদের আড্ডার সঙ্গী মীর রানা, বারবুল, তুষার, লাকি সকলেই জানান, ”দুপুর পর্যন্ত আড্ডা চলেছে। প্রতিদিন যেমন আমরা সকলে আড্ডা দিই, তেমনই দিয়েছি। মীর রানা জানায় যেহেতু রবিবার পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট ম্যাচ, তাই সে নিয়ে বেশি চর্চা হয়। কিন্তু বেলা ১২ টা নাগাদ সলমান উঠে যায়। তার ফোনের ডিসপ্লে নাকি খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তা সারাতে যাবে বলে চলে যায়। কিন্তু কখনও বুঝিনি সে খুনি হয়ে উঠেছে।” সলমন যে বন্ধুকে খুন করতে পারে, তা যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না বন্ধুমহলের কেউ।
সলমনের মা পাপিয়া বিবি জানান, বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ নিজের স্কুটি নিয়ে বের হয় ছেলে। যাওয়ার সময় বলে যায় পাশের গ্রাম বাজিতপুরে একটি বিয়ের নিমন্ত্রণ আছে, রাত্রে সে বাড়িতে খাবে না। বাড়ি নাও ফিরতে পারে। তার দাবি, তার ছেলে এমন কাজ করতেই পারে না। তাকে কেউ ফাঁসিয়েছে। এদিকে গ্রামবাসীর জানায় গত কয়েকমাস ধরে অনলাইন গেমে বেশ কিছু টাকা হেরে বিপাকে পড়েছিল সলমন। এমনকি ইটভাটার নাম করে প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য জাবির হোসেনের কাছে তিন লক্ষ টাকা ধার করেছিল। তাই সহজেই বন্ধু সালাউদ্দিন ওরফে জয়কে অপহরণের গল্পে ফাঁসাতে পারলে লক্ষ্মী লাভ হবে। কারণ, গ্রামের মধ্যে সম্ভ্রান্ত পরিবার জয়দের। জয়ের বাবার ক্রাশারের ব্যবসা আছে। ইদের সময় চার ভাই গ্রামে এলে দামি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে দরজার সামনে। এসব দেখেই সে জয়কে খুনের পরিকল্পনা করে বলে প্রাথমিক অনুমান এলাকাবাসীর। কিন্তু টাকা আদায়ের জন্য কাকার পথ ধরে যে খুনি হয়ে উঠবে সলমন, তা ভাবতেও পারেনি তার কেউ।