নন্দন দত্ত, সিউড়ি: মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরে শুধু সশরীরে নয়, ছবিতেও অনুপস্থিত থাকবেন অনুব্রত মণ্ডল। কোথাও দলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ছবি পোস্টারে, ফেস্টুনে থাকবে না। শনিবারের তৃণমূলের জেলা কমিটির বৈঠকে এমনই নির্দেশ দিলেন কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী। এমনকী তাঁর নাম নিয়ে তেমন কিছু বলাও যাবে না।
বিকাশবাবুর এই নির্দেশ যে রাজ্য থেকে এসেছে জেলা কমিটির সদস্যদের সামনে তা তিনি হাবে-ভাবে বুঝিয়ে দেন। কেউ কেউ সে নিয়ে প্রশ্ন করলে কোর কমিটির অন্য সদস্য অভিজিৎ সিংহ (Abhijit Singha) জানিয়ে দেন, আইনি জটিলতা থাকার জন্যই দলকে এই কৌশল নিতে হচ্ছে। যদিও বৈঠকে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে দলের জেলা মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায় জানান, ‘‘অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে তাঁর কর্মীরা, তাঁর সংগঠন কেমন কাজ করছে তার পরীক্ষা দিতে হবে।’’ তবে ছবি না থাকা প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। তিনি বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডলের ছবি আমাদের সকলের হৃদয়ে আছে। তাঁকে সামনে রেখেই আমরা চলছি।’’
[আরও পড়ুন; ‘পয়গম্বরকে অপমান করলে দেশের সব শহরকে কারবালা বানিয়ে দেব’, হুমকি মুসলিম নেতার]
আগামী ৩০ জানুয়ারি জেলা সফরে বীরভূমে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। প্রশাসনিক সূত্রের খবর অনুসারে পরের দিন ৩১ জানুয়ারি প্রশাসনিক সভা। তার পরদিন ১ ফেব্রুয়ারি বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে প্রশাসনিক সভা। দীর্ঘদিন পরে মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে। তাও আবার অনুব্রতহীন বীরভূমে। তাই ডাকবাংলোর মাঠে জনসমাগমের দায়িত্ব জেলার নেতাদের কাঁধে তুলে নেওয়ার জন্য শনিবার বিকালে বোলপুরে দলের সদর দফতরে বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে দলের জেলা কমিটির সদস্যদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়, অনুব্রত মণ্ডল না থাকায় সংগঠনের যে কিছু ক্ষতি হয়নি তা সেদিন বুঝিয়ে দিতে হবে। প্রায় তিনলক্ষ লোকের সমাগম করতে হবে। যারজন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বোলপুর লাগোয়া মূলত চারটি ব্লককে। বোলপুর, লাভপুর, নানুর ও সিউড়ি-২ ব্লককে। যাদের প্রতিটি বুথ থেকে বাসে ঠাসা কর্মী হাজির করতে হবে। তার জন্য ক’টি বাস লাগবে তা আগে থেকে ঠিক করে বলতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও সিউড়ি ও রামপুরহাট মহকুমা থেকে ক’টি করে বাস আসবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
[আরও পড়ুন; ‘পয়গম্বরকে অপমান করলে দেশের সব শহরকে কারবালা বানিয়ে দেব’, হুমকি মুসলিম নেতার]
দলের তরফে জানানো হয়েছে, সেদিন সকাল থেকে বোলপুরের প্রতিটি পথ যেন তৃণমূল (TMC) কর্মী সমাগমে ভরে যায়। মোটের উপর অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mandal) আটক করে যে দলের কোনও ক্ষতি করা যায়নি সেই বার্তা দিতে হবে বিরোধীদের। বৈঠকের শেষ পর্বে এসে অনুব্রত মণ্ডলের ছবি ফেষ্টুন বা ব্যানারে না থাকার নির্দেশিকা দেওয়া হয়। যা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে যান কর্মীরা। কারণ মুখ্যমন্ত্রী যাকে বীরের সন্মান দিয়ে জেল মুক্তির কথা বলেছেন। জেলায় এসে অনুব্রতকে বারেবারে বাঘের সঙ্গে তুলনা করেছেন ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। প্রতিটি অনুষ্ঠানে অনুব্রত মণ্ডলের ছবি যেখানে জ্বলজ্বল করে। সেখানে এই সিদ্ধান্তের পিছনে দলের একাংশের দাবি প্রভাবশালী তত্ব কাটাতেই এই কৌশল। যদিও বিরোধীদের দাবি, ক্লিন ইমেজ বজায় রাখতে অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডলকে সংগঠন থেকে ছেঁটে ফেলার অবস্থান নিতে চাইছে দল। তাঁকে ছাড়া বীরভূমের সংগঠনকে মজবুত করার প্রয়াস শুরু হল।