বিক্রম রায়, কোচবিহার: একটা সময়ে পরিচিত ছিলেন তৃণমূল নেতা হিসেবে। দল বহিষ্কার করার পর ২০১৮ সালে যোগ দেন বিজেপিতে। তার পরই সোজা পৌঁছে গিয়েছেন সংসদে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক কোচবিহারে ‘দাগী’ হিসেবেই পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে কার্যত মামলার পাহাড়। ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে মামলার তালিকা। গত লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত নিশীথের বিরুদ্ধে ১১ টি মামলা ছিল। এবার নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামায় বিজেপি প্রার্থী নিশীথ জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪। এর মধ্যে দিনহাটা থানাতেই নয়টি।
কোন থানায় কোন ধারায় মামলা রয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির প্রার্থীর?
১. আলিপুরদুয়ার থানা: ১৯ মে ২০০৯ নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে মামলা। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় (U/S-461/379/411) মামলা রুজু করা হয়।
- 461- অসাধুভাবে কোনও কিছু ভাঙা।
- 379- চুরি, জীবন ও সম্পত্তি বিপন্ন করা।
- 411- চুরি করা হয়েছে জেনেও অসাধুভাবে সেই সম্পত্তির ভাগ নেওয়া।
২. আলিপুরদুয়ার থানা: ২০০৯ সালের ১৯ মে আরও একটি মামলা দায়ের হয় নিশীথের বিরুদ্ধে। ধারা, U/S- 457/380/411।
- 457- কারও বাড়িতে অনুপ্রবেশ বা বাড়ি ভাঙা।
- 380- দালান বা তাঁবুতে চুরি।
- 411-চুরি করা হয়েছে জেনেও অসাধুভাবে সেই সম্পত্তির ভাগ নেওয়া।
৩. দিনহাটা থানা: ২ মে ২০১৩ সালে দায়ের হয়েছে নিশীথের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা। ভারতীয় দণ্ডবিধির চারটি ধারায় (U/S-447/427/379/34) মামলা।
- 447-অনুপ্রবেশ।
- 427-স্বেচ্ছায় ক্ষতিসাধন করা, চুরি।
- 34-সংঘবদ্ধভাবে অপরাধ।
৪. দিনহাটা থানা: পাঁচ মাসের ব্যবধানে নিশীথের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয় দিনহাটা থানায়। দিনটি হল ২০১৩ সালের ১৪ অক্টোবর। ধারা, U/S-448/353/186/34।
- 448-বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ।
- 353-সরকারি কর্মচারীকে তার দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার জন্য আক্রমণ, বাধা দেওয়া।
- 186-সরকারি কর্মচারীকে তাঁর কাজে বাধা দেওয়া।
- 34- সংঘবদ্ধভাবে অপরাধ।
৫. দিনহাটা থানা: ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর আরও একটি মামলা দায়ের হয় নিশীথের বিরুদ্ধে। ভারতীয় দণ্ডবিধির U/S- 448/326/354 ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে কেস।
- 448-গৃহে অনধিকার প্রবেশ।
- 326-গুরুতর আঘাত করা।
- 354- মহিলার সঙ্গে অশালীন আচরণ।
- 427-স্বেচ্ছায় ক্ষতিসাধন করা।
৬. দিনহাটা থানা: মাঝে পেরিয়েছে ৪ বছর। ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল একটি মামলা দায়ের করা হয়। ধারা, U/S-148/147/149/427/326/302।
- 148-দাঙ্গা, বেআইনি অস্ত্র মজুত।
- 147-দাঙ্গা।
- 149- বেআইনি সমাবেশ।
- 427-ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতি করা।
- 326- গুরুতর আঘাত করা।
- 302- খুন।
[আরও পড়ুন: CAA-তে আবেদন করলেই ৫ বছরের জন্য বিদেশি! মতুয়াদের সাবধান করলেন মমতা]
৭. দিনহাটা থানা: ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল দিনহাটা থানায় দায়ের হয় আরও একটি মামলা। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৭ টি ধারা দেওয়া হয় তাঁর বিরুদ্ধে। সেগুলো হল, U/S- 147/148/149/448/327/379/506।
- 147-দাঙ্গা।
- 148-দাঙ্গা, অস্ত্র মজুত।
- 149-বেআইনি সমাবেশ।
- 448-বাড়িতে অনুপ্রবেশ।
- 327-ইচ্ছাকৃত আঘাত করা।
- 379-চুরি।
- 506-ভয় দেখানো।
৮. দিনহাটা থানা: পাঁচ মাসের ব্যবধানে ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট ফের দিনহাটা থানায় মামলা হয় নিশীথের বিরুদ্ধে। ধারা, U/S- 341/326/307/120(B)IPC এবং R/W-SEC-25(1)(A)35ARMS।
- 341-অন্যায়ভাবে কাউকে আটকানো।
- 326- গুরুতর আঘাত করা।
- 307- হত্যার চেষ্টা।
- 120B- অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র।
- 25(1)A/35- অস্ত্র আইন।
৯. দিনহাটা থানা: একই বছরের ৯ অক্টোবর নিশীথের বিরুদ্ধে দিনহাটা থানায় মামলা দায়ের হয়। ধারা, U/S-427/506/34 IPC এবং R/W-3/4 EX ACT।
- 427-স্বেচ্ছায় ক্ষতি করা।
- 506- কাউকে ভয় দেখানো।
- 34- সংঘবদ্ধভাবে অপরাধ।
- R/W-3/4(বিস্ফোরক আইন)-বিস্ফোরণে যুক্ত থাকার অভিযোগ।
১০. কোচবিহার কোতোয়ালি থানা: ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আরও একটি মামলা হয়। ধারা, U/S-399/402/IPC, R/W SEC 25(1)/27/35 ARMS ACT।
- 399-ডাকাতির প্রস্তুতি।
- 402-ডাকাতির উদ্দেশ্যে পাঁচ বা তাঁরও বেশি ব্যক্তি একত্রিত হওয়া।
- R/w Sec-25(1) 27/35- অবৈধ অস্ত্র রাখা এবং বেআইনি ভাবে অস্ত্র লেনদেন।
১১. দিনহাটা থানা: এক মাসের ব্যবধানে আরেকটি মামলা দায়ের হয় দিনহাটা থানায়, ১৬ মার্চ ২০১৯। ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা, U/S-406/420/506/34।
- 406-অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ।
- 420- প্রতারণা,
- 506-ভীতি প্রদর্শন।
- 34- সংঘবদ্ধভাবে অপরাধ।
১২. কোচবিহার কোতোয়ালি থানা: লোকসভা নির্বাচনের হলফনামায় তিনটি নতুন মামলার উল্লেখ করেছেন নিশীথ। একটি কোতয়ালি থানায়, কেস নম্বর ২১৪/২০১৯। ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা, U/S- 341/323/186/188/353/332/506/34।
- 341-অন্যায়ভাবে কাউকে বাধা দেওয়া।
- 323-স্বেচ্ছায় আঘাত করা।
- 186-কোনও সরকারি কর্মচারীকে বাধা দেওয়া।
- 188-সরকারি কর্মচারী কর্তৃক জারি করা আদেশ না মানা।
- 353-সরকারি কর্মচারীকে কাজ করা থেকে বিরত করা।
- 332-সরকারি কর্মচারীকে তাঁর দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে আঘাত করা।
- 506-ভয় দেখানো।
- 34-সংঘবদ্ধভাবে অপরাধ।
১৩. দিনহাটা থানা: দিনহাটা থানায় নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও একটি মামলা। কেস নম্বর ৪৬৪/২০২০। ধারাগুলো হল, U/S- 341/427/324/307/506/34।
- 341-কাউকে আটকানো।
- 427- স্বেচ্ছায় ক্ষতি করা।
- 324- স্বেচ্ছায় বিপজ্জনক অস্ত্র দিয়ে কাউকে আঘাত করা।
- 307- খুনের চেষ্টা।
- 506-ভয় দেখানো।
- 34-সংঘবদ্ধভাবে অপরাধ।
১৪. মাথাভাঙা থানা: মাথাভাঙা থানাতেও একটি মামলা রয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। কেস নম্বর ৪১০/২০। ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারাগুলো হল, U/S- 143/186/188 এবং R/W Sec 51(b) D.M Act, 2005।
- 143- বেআইনি সমাবেশ।
- 186- সরকারি সম্পত্তি হস্তান্তরে বাধা দেওয়া।
- 411- চুরি হয়েছে জেনেও সেই সম্পত্তির ভাগ নেওয়া।
- 188- জনসাধারণের দ্বারা যথাযথভাবে প্রচারিত আদেশের অবাধ্যতা।
- R/W Sec 51(b) D.M Act, 2005- সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্দেশ ছাড়াই আইনের অধীন দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া।
১৪ টি মামলায় অভিযুক্ত নিশীথ প্রামাণিক ফের ভোটের লড়াইয়ে। কোচবিহার থেকেই আবার তাঁকে টিকিট দিয়েছে বিজেপি। এদিকে তাঁর প্রতিপক্ষ তৃণমূলের জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া। ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী নীতীশচন্দ্র রায়। প্রতিপক্ষকে পিছনে ফেলে কি এবারও এগিয়ে যাবেন ‘দাগী’ নিশীথ? উত্তর মিলবে ভোটের ফলে।