রূপায়ন গঙ্গোপাধ্যায়: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের বিরুদ্ধে আদালতে গেল বিজেপি। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হওয়ার পরও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে তা লাগু হতে দেবে না।এই বিবৃতিতে আপত্তি বিজেপির। এ নিয়ে আজ, রবিবার হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করছে তারা। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, “নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল লোকসভা, রাজ্যসভায় পাস হয়েছে। রাষ্ট্রপতি তাতে সই করে আইনে প্রণয়ন করেছেন। এই আইন সারা দেশেই লাগু হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন তিনি এই আইন বাংলায় লাগু হতে দেবেন না। সংবিধান বিরোধী কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই আমরা কোর্টে যাচ্ছি।”
[আরও পড়ুন :‘সরকারি বিজ্ঞাপনে CAA বিরোধী প্রচার করতে পারেন না’, মমতাকে কটাক্ষ ধনকড়ের]
এদিকে, নাগরিকত্ব আইন পাসের প্রতিবাদে রাজ্যে যে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সেই বিষয় নিয়ে রবিবার রাতে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে বিজেপির এক প্রতিনিধি দল। বিজেপির তরফে রাজ্যপালের কাছে আর্জি জানানো হয়, রাজ্যে যে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলার। রাজ্যে শান্তি ফেরানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রাজ্যপালকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন দিলীপ ঘোষরা। রাজ্যে সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবাদে ও নাগরিকত্ব আইন পাসের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অভিনন্দন জানাতে ২৩ ডিসেম্বর কলকাতায় দলের রাজ্য দফতর থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল হবে। মিছিলে লক্ষাধিক লোকের জমায়েত হবে বলে জানান দিলীপ ঘোষ। এদিকে, রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপির তরফে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। রেল স্টেশন ও ট্রেনে তান্ডবের ছবি ও ভিডিও রেলমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে সব রিপোর্ট দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। কেন্দ্রীয় সরকারকে রিপোর্ট পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।
[আরও পড়ুন :‘পর্যাপ্ত ফোর্সের অভাবেই স্টেশন আতঙ্কপুরী, লাগাতার আক্রমণে সাফাই রেলেররেন না’, মমতাকে কটাক্ষ ধনকড়ের]
সিএএ-র কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা উদ্বাস্তুদের ফাস্ট ট্র্যাক করে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। ফলে এতদিন যাঁরা ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ছিলেন, তাঁরা ফাস্ট ট্র্যাক হয়ে নাগরিকত্ব পাবেন। রবিবার প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেছেন রাজ্য সভার সাংসদ তথা বিজেপি নেতা স্বপন দাসগুপ্তও। তাঁর কথায়, “ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে পূর্ববঙ্গের মানুষদের বড় ভূমিকা আছে। সেলুলার জেলে যাঁরা বন্দি ছিলেন, তাঁদের ৬০%ই পূর্ববঙ্গের। মুখমন্ত্রীর কাছে আমার প্রশ্ন, পূর্ববঙ্গের এই মানুষরা কী দোষ করেছেন? মুখ্যমন্ত্রী কি চান না যে এই পূর্ববঙ্গ থেকে আসা উদ্বাস্তুরা নাগরিকত্ব পান?” সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্তের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীকে স্পষ্ট করতে হবে, তিনদিন ধরে যাদের রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংস করতে দেখা গিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাঁর প্রশ্ন, কার বা কিসের স্বার্থে এই তাণ্ডব চালানো হল, তা স্পষ্ট করতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। মুখ্যমন্ত্রী দেখলাম শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু এখনও কেন পুলিশকে কড়া হাতে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কড়া হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় নি, তা মুখ্যমন্ত্রীকে স্পষ্ট করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে একথাও স্পষ্ট করতে হবে যে, সংবিধানিকভাবে তিনি শপথ নিয়েছেন। তারপরও কীভাবে তিনি সংসদে পাস হয়ে যাওয়া একটি আইন সম্পর্কে দেশের মানুষের সামনে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার করছেন? সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন রাজ্য বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়া।
[আরও পড়ুন :‘ওঁরা বুদ্ধিজীবী নয়, আল্লাহজীবী’, রাজ্যে অশান্তি নিয়ে বিদ্বজ্জনদের তোপ রাহুলের]
এদিকে, দিলীপ ঘোষ এদিন অভিযোগ করেন, রাজ্যে অশান্তির ঘটনা তৃণমূলের পূর্ব পরিকল্পিত। পুলিশ নীরব দর্শক। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে রাজ্য ব্যবস্থা না নিলে বিজেপি ও সাধারণ মানুষ চুপ করে থাকবে না। সরকার কিছু না করলে আমাদেরই কিছু করতে হবে। এদিন, বিজেপির রাজ্য দফতরে জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন দিলীপ ঘোষ, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসুরা। সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবাদে জেলায় জেলায় প্রতিবাদ মিছিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
The post ‘সংবিধান বিরোধী কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী’, রাজ্যের অশান্তি নিয়ে তোপ দিলীপের appeared first on Sangbad Pratidin.