অপরাজিতা সেন: বঙ্গ বিজেপির কথায় নেচে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে কতটা টক্করে যাওয়া হবে, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত বিজেপির (BJP) শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজ্য সংগঠনকে অর্থ-সহ অন্যান্য সহযোগিতা করা হলেও, রাজ্য নেতাদের আর্জিতে তৃণমূলের পিছনে এজেন্সি লাগিয়ে বা রাজ্য সরকারের প্রাপ্য অর্থ না দিয়ে এভাবে চূড়ান্ত সংঘাতের পথ কতটা যুক্তিযুক্ত, সেটা নিয়েই মতান্তর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে।
বঙ্গ বিজেপির (Bengal BJP) উপর সামগ্রিকভাবে বিরক্ত বিজেপির দিল্লির (Delhi) নেতারা। তবুও তৃণমূল বিরোধিতার ক্ষেত্রে কিছুটা কট্টরপন্থী অমিত শাহরা এখনও বঙ্গ বিজেপির নানা দাবিতে মদত দেওয়ার পক্ষে। কিন্তু, ভিন্ন অবস্থান খোদ নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) এবং রাজনাথ সিংদের (Rajnath Sing)। তাঁদের বক্তব্য, তৃণমূলের (TMC) বিরুদ্ধে এজেন্সি লাগিয়ে, কেন্দ্রীয় দল পাঠিয়ে, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নানারকমভাবে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে শেষপর্যন্ত বঙ্গ নেতাদের ব্যর্থতায় দলের মুখ পুড়েছে।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পরাজয়ের পর গোটা দেশে বিজেপির নাক কাটা গিয়েছে। বঙ্গ নেতাদের পরামর্শে ফের তৃণমূলের সঙ্গে চূড়ান্ত সংঘাতে গিয়ে পঞ্চায়েত ভোটে বিশাল পরাজয় হলে বিজেপির পক্ষে ফের মুখ দেখানো সমস্যার হবে। বঙ্গ বিজেপির কথাতে কেন্দ্রের কিছু মাঝারি মাপের মন্ত্রী রাজ্যের বিরুদ্ধে বৈরিতামূলক আচরণ করছেন। অমিত শাহও মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের উপর চাপ রাখা দরকার। কিন্তু মোদি-রাজনাথরা নিজেদের মান বাঁচাতে কিছুটা নরমপন্থী রাস্তায় হাঁটতে আগ্রহী।
[আরও পড়ুন: ‘শিলিগুড়ির বিধবাকে রক্ষিতা বানিয়ে ফুর্তি’, সৌমিত্রর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সুজাতা]
পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayet Election) জন্য বঙ্গ বিজেপির নেতারা ৭০ হাজার প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রার্থী খুঁজতে তাঁরা মিসড কল দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। এই অবস্থায় মোদি-রাজনাথরা মনে করছেন, এজেন্সিকে ব্যবহার করে তৃণমূল নেতাদের হেনস্থা করলে, রাজ্য সরকারের প্রাপ্য অর্থ বন্ধ করলে, ঘনঘন কমিটি পাঠালে তা দলের আরও বিরুদ্ধেই যাবে। বাংলাতে মানুষ বিজেপির উপর আরও ক্ষুব্ধ হবে। সেই ক্ষোভকে কাজে লাগাবে তৃণমূল। বস্তুত, ইতিমধ্যে বাংলাতে যে কেন্দ্রীয় সরকারের কমিটিগুলি গিয়েছে তারা তাদের আনুষ্ঠানিক রিপোর্ট দেওয়ার আগে দিল্লিতে বলছে, অনেক রাজ্যের চেয়েই বাংলায় ভাল কাজ হচ্ছে।
অন্য রাজ্যের চেয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মও অনেক কম। কমিটির সদস্যদেরও সাধারণ মানুষ জানিয়েছে, রাজ্য সরকারের কাজে তারা খুশি। বাম আমলে সরকারি পরিষেবা মিলত না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে পরিষেবা মেলে। কোথাও হয়তো কোনও একটি প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু, বাকি সাতটা প্রকল্পে ভাল পরিষেবা মিলছে। একের পর এক কমিটির এটাই রিপোর্ট। কমিটির সদস্যরা রাজ্যের আমলাদেরও সেকথা জানিয়েছেন। দিল্লি ফিরে এসে কমিটির সদস্যদের রিপোর্ট লিখতেও সমস্যা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় দলগুলির এই ধরনের রিপোর্টে নড়ে বসেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারাও। সন্ত্রাসের তদন্তে আসা কমিটি দেখেছে মৃত্যুর ঘটনাটি হয়তো ঠিক। কিন্তু গ্রামবাসীদের ক্ষোভ তৃণমূলের বিরুদ্ধে নয়। গ্রামের উন্নয়নে সবাই খুশি। কয়েকটি প্রকল্পভিত্তিক কিছু অভিযোগকে সার্বিক সত্য বলে দেখা ঠিক হবে না বলে কমিটিগুলির মত।
[আরও পড়ুন: পথ ডাকাতি হলেই কাঠগড়ায় উঠত শবররা, পালাবদলে ‘জন্ম অপরাধী’দের বন্ধু পুলিশ]
রাজ্যে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট বিজেপির কাছে অ্যাসিড টেস্ট। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে যে রিপোর্ট তাতে লোকসভা ভোটে এবার বাংলায় আসন কমবে। বাংলার নেতারা যে ছবি দিচ্ছেন। তার সঙ্গে সত্যের বিস্তর ফারাক বলেও শীর্ষ নেতারা মনে করেন। বঙ্গ বিজেপির নেতারা আগেও এভাবেই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে রিপোর্ট দিয়ে দলকে ভুল পথে চালিত করেছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে বাংলায় বিজেপির কোনও জনভিত্তিই গড়ে ওঠেনি। বিধানসভা ভোটের আগে বাংলার নেতাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘দুশো পার’। আবারও তৃণমূল ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে চূড়ান্ত সংঘাতের পথে হেঁটে পঞ্চায়েত ভোটে বিরাট বিপর্যয় হলে ভয়ংকরভাবে বিজেপির মুখ পুড়বে বলে মোদি-রাজনাথদের ধারণা। তাঁদের মতে, এটা লোকসভা ভোটের সামগ্রিক ফলকেও ধাক্কা দেবে। এই পরিস্থিতিতে বাংলার নেতাদের কথায় নাচতে মোটেই রাজি নয় মোদি-রাজনাথরা।